কাজী হেলালের কবিতায় ইতিহাস

সামিনা চৌধুরী

চেতনায় উজ্জ্বল উদ্দীপনা আর মগজের কোষে ছড়িয়ে থাকা ঘটনা প্রবাহকে হৃদয়ের আবেগ আর ভালবাসা দিয়ে একসাথে গেঁথে কবিতায় প্রকাশ করতে পারেন কাজী হেলাল। কবিতায় ইতিহাস উপস্থাপন বিষয়টি নিয়ে কবি টি এস এলিয়ট ‘ট্র্যাডিশন এন্ড দ্যা  ইন্ডিভিজুয়াল ট্যালেন্ট’ (Tradition and the Individual Talent) প্রবন্ধে বলেছেন ‘যদিও সমসাময়িক ঐতিহাসিক বোধ অস্থায়ী, কিন্তু এই উপাদানটিই একজন লেখককে ঐতিহ্যগত করে তোলে এবং একইসাথে এটিই একজন লেখককে সময়ের সাথে তার স্থান সম্পর্কে, তার নিজের সমসাময়িকতা সম্পর্কে সবচেয়ে তীব্রভাবে সচেতন করে তোলে’ কাজেই আধুনিক সচেতন মানুষ যখন সাহিত্য রচনা করেন, সেই সাহিত্যে সমকালীন ইতিহাস ছায়া ফেলে; লেখক যে সময়ে বাস করেন, সেই সময়টিই লেখকের লেখায় জীবন্ত হয়ে ওঠে। জীবনানন্দ থেকে শুরু করে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন কবির কবিতায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের হতাশা, দেশে দেশে রাজনৈতিক উত্থান পতনের ঘটনাবলীতে প্রতিবাদ, আবার কখনোবা আশার বাণী লিখেছেন কবিরা। স্বাধীনতা এবং স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময়ে বাংলাদেশের কবিদের কবিতায়ও উঠে এসেছে সেই উত্তাল সময়ের অনুভুতি আর ইতিহাস। কাজী হেলালের ‘পানকৌড়ির ডুবসাঁতার’ এবং ‘শ্রাবনীর চোখে স্থলপদ্ম’ কাব্যগ্রন্থে প্রকাশিত কবিতাগুলোতে দ্রোহ, প্রেম, প্রকৃতির সাথে চিত্রিত হয়েছে ইতিহাস। কখনো তার কবিতায় জীবন্ত হয়ে উঠেছে বিখ্যাত ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব, আবার কখনো একাত্তর, আবার কখনো স্বৈরাচার। সমকালীন করোনা মহামারী আর অদৃশ্য বর্ণবাদের শৃঙ্খলও তার কবিতায় লিপিবদ্ধ হয়েছে।

ইতিহাস লিখার সময় স্থান কাল সুনির্দিষ্ট করে বলা হলেও সেই সময়ের আবেগ, সেই সময়ের মানুষের অনুভূতি বোঝার জন্য পাঠককে সাহিত্যের আশ্রয় নিতেই হয়। ইতিহাস থেকে জুলিয়াস সিজার সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া গেলেও শেক্সপিয়ারের জুলিয়াস সিজার ঠাঁই পায় পাঠকের ভালবাসায়, আবেগে, অশ্রুজলে। আর তাই আধুনিক কবিরা সমসাময়িক সময়ের খ্যাতিমান বা আলোচিত মানুষদের নিয়ে কবিতা লিখে থাকেন। আমেরিকান কবি ওয়াল্ট হুইটম্যান ১৮৬৫ সালে আব্রাহাম লিংকন হত্যার পর প্রচন্ড শোকে মুহ্যমান আমেরিকার মানুষের মনের ছবি এঁকে লিখেছিলেন তার বিখ্যাত কবিতা, ‘হোয়েন লায়লাক লাস্ট ইন দা ডোরইয়ার্ড ব্লুমড (When Lilac last in Dooryard Bloom’d)। এইসব কবিতাগুলোর সাহিত্য মূল্যের পাশাপাশি ঐতিহাসিক গুরুত্বও অসামান্য।

স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেরণাদায়িনী ‘শহীদ জননী জাহানারা ইমাম, সমাজসংস্কারক রাজা রামমোহন রায়, আলেকজান্দ্রিয়ার গণিতবিদ ও দার্শনিক হাইপেশিয়া, মারাঠি বিপ্লবী নেত্রী ঝাঁসীর রাণী, বৈশালীর নৃত্য পটিয়সী আম্রপালি, সিপাহী বিদ্রোহের বীর মঙ্গলপান্ডে, আফ্রিকান আমেরিকান জাতীয়তাবাদী নেতা ম্যালকম এক্স, মানগড়ের বিস্মৃত ভীল নায়ক গোবিন্দ গিরি, নকশালবাড়ি কৃষক আন্দোলনের নেতা চারু মজুমদার সহ আরো অনেকেই স্বসম্মানে স্থান করে নিয়েছেন কাজী হেলালের কবিতায়। কবি তার বিশাল ইতিহাস জ্ঞানকে অসামান্য কাব্যিক মুন্সিয়ানায় উপস্থাপন করেছেন কবিতায়।

কবিতার আবেগ পাঠককে প্রেরণা দেয়, শক্তি দেয়, চেতনা দেয়। বাংলা কবিতায় এই বিষয়টির শ্রেষ্ঠ উদাহরণ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের জন্য লিখা গান ও কবিতা। ‘মোরা একটু ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’ – এই কবিতায় মিশে আছে ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’ এর হুংকার। ১৯৭১ এর সময়টাকে জানতে হলে ইতিহাসের পাশাপাশি এইসব কবিতা পাঠককে সাহায্য করে সেই সময়ের আবেগটাকে বুঝতে। রক্তঝরা একাত্তরে কবি শামসুর রাহমান লিখেছেন, ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা, আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায়?’ স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের প্রেক্ষাপটকে ইতিহাসের পাতায় রাখার জন্য কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছেন ‘স্বাধীনতা শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো’। এই কবিতাগুলো পাঠককে দেয় একাত্তরের উত্তাল সময়ের অনুভব। কাজেই আজও স্বাধীনতার কবিতা পাঠক আদৃত হয়। কাজী হেলাল ‘দুই শব্দের মহাকাব্য’ কবিতায় ‘জয় বংলা’ শ্লোগানের শক্তি নিয়ে লিখেছেন,

‘এমন বিশাল মহাকাব্যের বাণী
ধ্বনিত হয়নি আগে কোনো দিন, হবে না আর কোন কালে!’

একাত্তরে যুদ্ধের ডাকে ছুটে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধার তরুণী নির্যাতিতা বিরহী বধূর ভারাক্রান্ত নীরবতার আখ্যান লিখে তার ‘ব্রেইন ডিফেক্ট পাখি’ কবিতায় বলেছেন,
‘চারপাশে কবরের নিস্তব্ধতা! শুনশান বাতাস!
গাঙের জল উজানে বয়, কথা তো কেহ নাহি কয়।’

বঙ্গবন্ধু, একাত্তরের চেতনা আর একাত্তরের অনুভবকে নিয়ে কাজী হেলাল লিখেছেন ‘ঈশ্বরের বরপুত্র’, ‘অসমাপ্ত যুদ্ধের পদাবলী’ সহ আরো বেশ কয়েকটি কবিতা। ‘একাত্তরের একাত্মতা’ কবিতায় মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু গায়ক জর্জ হ্যারিসনের ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ এর উল্লেখ করে আপামর মানুষের অংশগ্রহণের মুক্তিযুদ্ধ আর তার গৌরবময় প্রাপ্তি স্বাধীনতা নিয়ে বলেছেন,

‘প্রিয় নেতা মার্টিন লুথার কিং-এর মতো
আমরাও ঘোষণা করলাম দীপ্তস্বরে –
অবশেষে আমরা মুক্ত
সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।’

বাংলাদেশের ইতিহাসের আরেকটি শ্রেষ্ঠ অর্জন ভাষা আন্দোলন। এই বিষয়ে প্রায় সকল কবিই কবিতা লিখেছেন। কাজী হেলাল লিখেছেন ‘বায়ান্নর ভরদুপুরে’ সহ আরো বেশ কয়েকটি কবিতা। বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় স্বৈরশাসকের সময়কাল। অবৈধ সামরিক শাসকের পতনের দাবীতে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তুমুল ছাত্র আন্দোলনের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন কাজী হেলাল। সেই সময় জাতীয় কবিতা উৎসবের আয়োজন হতো যেখানে জ্বলে উঠতো বারুদ। এসময় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে লেখা কবি মোহাম্মদ রফিকের ‘সব শালা কবি হবে, পিঁপড়ে গোঁ ধরেছে উড়বেই, দাঁতাল শুয়োর এসে রাজাসনে বসবেই।’ ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল শাসকের। সেই উত্তাপ, আন্দোলনে গর্জে ওঠা সহযোদ্ধার হৃদয়ের উষ্ণতা পাওয়া যায় কাজী হেলালের কবিতায়। ‘নিঃসঙ্গ পরিব্রাজক’, ‘শ্রাবনীর চোখে স্থলপদ্ম’, ‘মধ্যাহ্নে জোৎস্নার ফুল’ কবিতাগুলো পড়তে পড়তে পাঠক হেঁটে আসবেন সেই স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্মৃতির পথে।

ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির জগতে ছিলেন কাজী হেলাল। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় নিয়মিত লেখা প্রকাশিত হলেও, জীবন জীবিকার ব্যস্ততায় লিখতে পারেননি আর। কিন্তু করোনার একাকী সময়ে তিনি লিখতে শুরু করেন। ‘পানকৌড়ির ডুবসাঁতার’ কাব্য গ্রন্থের ভূমিকায় তিনি লিখেছেন, ‘দুই হাজার বিশ সালে প্যানডেমিকে সারা পৃথিবী স্থবির হয়ে গেলে, আমরা সবাই ঘরবন্দি। কেমন করে যেন আবার আমার কলমে কালি ফিরে এলো।’ ছোট একটা করোনা ভাইরাস কেড়ে নিয়েছিল প্রায় ৭০ মিলিয়ন মানুষের প্রাণ। এসময় মানুষকে বর্জন করতে হয়েছিল মানুষের সান্নিধ্য। এসময়ের একাকী মানুষ পুরা মানব সভ্যতার ক্রান্তিকালের সংশয়ে ছিল। নিঃস্তব্ধ জনপদ, গৃহবন্দী মানুষ, এমনকি মৃতদেহ সৎকারেও মানুষ ভুলে ছিল স্বজনকে; বন্ধুর হাসি, বন্ধুর স্পর্শ কতটা অচ্ছুৎ হয়ে গিয়েছিল, সেইসব করুণ গাঁথা লিখেছেন কাজী হেলাল। তার কবিতায় উঠে এসেছে প্রকৃতির ইচ্ছার কাছে মানুষের অসহায়তা, অনিশ্চয়তা, আধ্যাত্মিকতা, ভয়, হতাশা আর আশা। সময়টি ছিল যেন ঈশ্বরের অভিশাপ। তিনি ‘ঈশ্বরের নতুন প্রজ্ঞাপন’ কবিতায় লিখেছেন,

‘হে মানবজাতি – আমি ঠিক এই মুহূর্ত থেকে
তোমাদের সমস্ত  স্বাধীনতা কেড়ে নিলাম।
আমি কেড়ে নিলাম তোমাদের সন্তানের ভালবাসা
স্ত্রীর প্রতি তোমাদের অধিকার, জৈবিক উল্লাস
সমস্ত মানবজাতিকে আমি অস্পৃশ্য করলাম’

করোনায় স্থবির শহরের বর্ণনায় ‘শেষ মানুষটির গল্প’ কবিতায় লিখেছেন, ‘মহামারী বিধ্বস্ত পরিত্যক্ত এই শহরে আমি একা বিষণ্ণ যাচ্ছি হেঁটে।’ স্তূপীকৃত লাশের পর লাশ পেছনে ফেলে –’ 

তিনি ‘মুখোমুখি মুখোশ’ কবিতায় মানুষের মুখ দেখতে না পাওয়ার বেদনা এঁকেছেন। করোনা সময়ের কবিতাগুলোর সুর করুণ, বিষন্ন, আশাহীন। কিন্তু বুদ্ধিমান আর পরিশ্রমী মানুষ সবসময় জয়ী হয়। জয়ের সেই যুদ্ধে থাকে প্রতিবাদ আর আশা। কাজী হেলাল তার ‘বিধাতার মুখোমুখি’ কবিতায় অভিযোগ করে লিখেছেন,
‘তুমি কেমন ঈশ্বর হে, তোমার শ্রেষ্ঠ জীবেরা
অসহায় বড়ো আজ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এক জীবাণুর কাছে।’  

ইতিহাসের পাতায় ১৯১৮ সালের স্প্যনিশ ফ্লুর ভয়াবহতার অনেক তথ্য পাওয়া যায়। আগামী একশত বছর পরে করোনার তথ্যাদিও ইতিহাসের পাতায় যুক্ত হবে। সেই সাথে যুক্ত হবে করোনা দুর্যোগ আক্রান্ত একজন্ কবি কাজী হেলালের অনুভব।

যে কোনও সাহিত্যে ছায়া ফেলে তার সমকালীন ইতিহাস, লেখকের লেখায় ঘিরে থাকে তার সময় ও স্বদেশ। এ প্রসঙ্গে কবি সুকান্তকে উল্লেখ করা যেতে পারে। তার কয়েকটি কবিতার শিরোনামগুলো হলো- ‘চট্টগ্রাম- ১৯৪৩’, ‘মধ্যবিত্ত ৪২’, `সেপ্টেম্বর ৪৬’, `ফসলের ডাক ১৩৫১’ `পয়লা মে-র কবিতা : ১৯৪৬’, `একুশে নভেম্বর : ১৯৪৬’, `১৯৪১ সাল’, `রোম, ১৯৪৩’ । কবিতাগুলো ইতিহাসের কোনো না কোনো পটভূমিতে লিখা। এভাবেই আধুনিক কবিদের কবিতায় উঠে আসে তাদের সময়ে তাদের যাপিত জীবনের আলেখ্য আর অনুভব। বাংলাদেশের সমকালীন ইতিহাসে রাজনৈতিক পটভূমির বাইরে একটি বড় সমস্যা নদী দখল, ভূমি দখল এবং পরিবেশ বিপর্যয়। মানবসৃষ্ট এই নজিরবিহীন পরিবেশ হত্যাযজ্ঞের কথা ইতিহাসের পাতায় লিখা হবে কালো অক্ষরে। পৃথিবীর সকল বড় সভ্যতাই কোনো না কোনো নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল একসময়। কিন্তু আজ সভ্যতার স্তনদায়িনী সেই নদী হত্যার উল্লাস করে বাংলাদেশের মানুষেরা। খুব সচেতন মানুষ কাজী হেলাল ‘মরে গেল নদীগুলো’ কবিতায় লিখেছেন,
‘বড়ো কষ্টে মরে গেল নদীগুলো …
মরা গাঙে ভাসে না ডিঙি, বজরার ভিড়।’

একইভাবে হচ্ছে ভূমি দখল। গাছ, পাহাড় কেটে মানুষ শুধুই নিজের বসতি গড়ায় ব্যস্ত। মারাত্বক পরিবেশ বিপর্যয়ে বিলীন আজ প্রাণিকুল, থাকছে প্রতি মৌসুমে বৈশ্বিক উষ্ণতার হুমকি। কাজী হেলালের কলমে তাই উঠে আসে সুন্দরবনের জন্য আশংকা। তিনি উচ্চারণ করেন ‘অশনি সংকেত যায় বয়ে ম্যানগ্রোভের হৃদপিন্ড করে ভেদ গভীর সমুদ্রে’ তার ‘জোয়ার ভাটায় নীল ডুমুর’ কবিতায়। 

অর্থনীতি, বিপণন, বাণিজ্য আর পর্যটন শিল্পের আলোকে বর্তমান পৃথিবীকে একটা গ্লোবাল ভিলেজ বলা গেলেও, আজো ছদ্দবেশে রয়ে গেছে বর্ণবাদ এবং সাম্রাজ্যবাদের কালো ছায়া। পৃথিবীর সকল মানুষ একসাথে ভালো নেই, ইলোন মাস্কের সম্পদের পাহাড়ের উপত্যকায় অভুক্ত শিশুরা আজো নির্ঘুম; ওবামার প্রাসাদের পাশেই ম্যানিয়াপোলিসে অমানবিক নিষ্ঠুরতায় প্রাণ হারায় আরেকজন কালো মানুষ। কাজী হেলাল এই অদৃশ্য বর্ণবাদের সাম্প্রতিক উদাহরণ নিয়ে ‘বর্ণবাদের বিষবৃক্ষ’ কবিতায় জর্জ ফ্লয়েডের ভাষায় লিখেছেন,
‘আমার কণ্ঠনালীর ওপরে হাঁটু গেঁড়ে বসেছিলেন পরিচালক …
নাক দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত গড়িয়ে ওষ্ঠ ছুঁয়ে যায়;  
নিশ্বাস নিতে কষ্ট বড়ো কষ্ট!’

প্রথম মহাযুদ্ধ পরবর্তীকালের কবিরা সমকালকে অনন্তকালের আবহমণ্ডলে রাখতে পারেননি। সমকালীন ইতিহাসে ও রাজনীতিতে চেপে বসা ক্ষমতালোভ ও নৃশংসতার সংঘর্ষ এবং তার কারণে বিপন্ন জনজীবন চিত্রিত হয়েছে তাদের কবিতায়। কবিতার এই উপাদানটি ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছে আধুনিক কবিতার বৈশিষ্ট। আধুনিক কবিতার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বুদ্ধদেব বসু ‘আধুনিক বাংলা কবিতা’ গ্রন্থের ভূমিকায় লিখেছেন, ‘একে বলা যেতে পারে বিদ্রোহের, প্রতিবাদের কবিতা, সংশয়ের, ক্লান্তির,

সন্ধানের, আবার এরই মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে বিস্ময়ের জাগরণ, জীবনের আনন্দ, বিশ্ববিধানে আস্থাবান চিত্তবৃত্তি’। এই আলোকে কাজী হেলালের কবিতায় দ্রোহ, ধর্মবিশ্বাসের পাশাপাশি সমকালীন বাস্তবতা ও ইতিহাস চিত্রণ পাঠককে সমসাময়িক ইতিহাসের সাথে তাদের নিজের জীবনকে সংযুক্ত করবে; সচেতন করবে; ইতিহাসমুখী করবে। কবি কাজী হেলালের কবিতা নিয়ে বলতে গিয়ে পানকৌড়ির ডুবসাঁতার গ্রন্থের ভূমিকায় কবি ও আবৃত্তিশিক্ষক রবিশঙ্কর মৈত্রী যথার্থই লিখেছেন, ‘তিনি ইতিহাসলগ্ন কবি। তার কবিতায় ইতিহাস যেন কথা কয়।’