দিলীপ চক্রবর্তী
দিলীপ চক্রবর্তী – জন্ম ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৩৭, বাংলাদেশের মাদারীপুর শহরে। বাল্য ও কৈশোর কেটেছে গাইবান্ধায়। ভারত বিভাগের পর ১৯৪৮ সালে পুরো পরিবারের সাথে দিলীপও ভারত চলে যান। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে দুইবার এমএ ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। পিএইচডি ডিগ্রি করেছেন আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
দিলীপ সাড়ে তিন দশকের অধ্যাপনা জীবন শুরু করেন আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে। ভারতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ২০০২ সালে অবসর গ্রহণ করেন তিনি। ২০০৪ সাল থেকে কানাডার ব্রাম্পটন শহরের বাসিন্দা। এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা চার।
দিলীপ চক্রবর্তী’র বইসমূহ

সপ্রতিভ

স্বগতোক্তি

জিন
দিলীপ চক্রবর্তী’র লেখাসমূহ
-
জাপানের অভিজ্ঞতা নিয়ে নতুন বই
ষোড়শ শতাব্দীর ইংরেজ লেখক ফ্রান্সিস বেকনের মতে একটা ভালো বই একই সঙ্গে পাঠকের জ্ঞানবর্ধন এবং আনন্দবর্ধন করে (Studies are for delight, for ornament, and for ability)। সুশীল কুমার পোদ্দারের লেখা ‘জাপানে যাপিত জীবন’ বইটি একটি ভালো বই হিসেবে গণ্য হবার দাবী রাখে। বইটি এতোটা তথ্যসমৃদ্ধ যে এক কথায় একে ‘মনিপূর্ণ খনি’ বলা যায় ।
-
শুধু অকারণ পুলকে
সকালে উঠে মনটা একসঙ্গে ভালো এবং খারাপ হয়ে গেল। ভালো হওয়ার কারণ উঠেই দেখলাম আকাশ থেকে পেজা তুলোর মতন ঝিরঝির করে তুষার পরছে। আর মনটা খারাপ হলো এই জন্য, যে আজ সকালে আর বাইরে হাঁটতে যেতে পারবো না। ঠান্ডার কারণে না, ঠান্ডা খুব বেশি নয়, কারণ হলো তুষার পড়ার ফলে ফুটপাত (এ দেশের ভাষায় সাইডওয়াক) পেছল হয়ে আছে, এই পথে হাঁটতে গেলে ‘পপাত ধরণীতলে’ হওয়ার খুব সম্ভাবনা।
-
বিদ্রোহী কবি নজরুল: এক বিরল প্রতিভা
সময়ের হিসাবে আধুনিক বাংলা কবিতা বিশ্বযুদ্ধোত্তর এবং ভাবের দিক থেকে তা রবীন্দ্র-বিরোধী। যে ক’জন কবি সাহিত্যিক আধুনিক কবিতার ধ্বজা বহন করেছিলেন কাজী নজরুল তাদের অন্যতম। বাকিদের মধ্যে সুভাষ মুখোপাধ্যায়, গোলাম কুদ্দুস, প্রেমেন্দ্র মিত্র, জীবনানন্দ দাশ, সুধীন দত্ত, বিষ্ণু দে, অমিয় চক্রবর্তী, বুদ্ধদেব বসু …
-
কানাডায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি আমাদের কর্তব্য
মানুষ সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে তার সন্তানকে। ঈশ্বর পাটনি নামের মাঝিকে মা অন্নপূর্ণা বর চাইতে বলাতে সে বলেছিল, “আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে।” ভগবান যেমন মানুষের মুখের আয়নায় নিজেকে দেখতে চান, সেরকম মানুষও তার সন্তানের মুখের আয়নায় নিজেকে দেখতে চায়।
-
আমার বাবা-মা
বাবাকে অল্প বয়সে হারিয়েছি। তিনি মাত্র ছেচল্লিশ বছর বয়সে পরলোক গমন করেন। তিনি জীবনে খুব সার্থক ছিলেন। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী এবং উচ্চশিক্ষিত ছিলেন। তিনি এম.এসসি., বি. এল. (গোল্ড মেডেলিস্ট) ছিলেন। কর্মজীবনে ছিলেন গেজেটেড অফিসার। আর সে কারণেই আমাদের ভাই-বোনদের জীবন ছিল মাতৃকেন্দ্রিক।
-
গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ
জহরলাল নেহেরু বলতেন যে, ভারতবর্ষকে জানতে হলে দুজনকে জানলেই চলবে – মহাত্মা গান্ধী এবং গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রথমজন যদি ভারতের শরীর হন, তাহলে দ্বিতীয় জন ভারতের আত্মা। ভারতের এই আত্মাকে জানতে হলে আমাদের প্রাচীন ভারতের শিক্ষাব্যবস্থাকে জানতে হবে। প্রাচীন ভারতীয় সমাজে শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও শিক্ষকের মর্যাদার আসন ছিল। তারই ফলস্বরূপ আমরা পেয়েছি সম্রাট অশোক এবং বিক্রমাদিত্যের মতো…
-
টরন্টোর মঙ্গল শোভাযাত্রা: ফিরে দেখা
সকালে এবং বিকেলে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করা আমার বহু বছরের অভ্যাস। যদিও আমার এই অভ্যাসকে আড়ালে কেউ কেউ বলেন পাগলামি, কেউ বলেন বাড়াবাড়ি, আবার কেউ বলেন আদিখ্যেতা। হাঁটার কথা মনে হতেই আমার দুজনের কথা মনে পড়ছে – ৭৫ বছর আগে প্রয়াত আমার বাল্যবন্ধু খোকন শিকদার – যে বলতো যে সে সকাল এবং বিকাল দুবেলাতে মর্নিং ওয়াক করে। কারণ ওর ধারণা ছিল হাঁটার ইংরেজি মর্নিং ওয়াক।
-
বিলে-নরেন-বিবেকানন্দ
‘বিলে’ নামের যে দুরন্ত বালক নিজের দুরন্তপনায় বাড়ির সকল আত্মীয়, নিজের বন্ধু-বান্ধবদের এবং পাড়াপড়শিদের ব্যতিব্যস্ত করে রাখত সেই বিলে যুবক বয়সে রামকৃষ্ণদেবের ভাবশিষ্য হিসেবে যুবক নরেন্দ্রনাথ রূপে ভারতীয় সমাজকে আলোড়িত করেছিল। তিনিই আবার স্বামী বিবেকানন্দ রূপে শিকাগোর মহাধর্ম সম্মেলনের শ্রেষ্ঠ বক্তা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে সারা বিশ্বের চিন্তাবিদদের নজর কেড়েছিলেন।
-
গীতা নিয়ে সংলাপ
‘শিক্ষিত’ বলতে আমরা সাধারণত দুই ধরনের পড়াশোনা করা মানুষকে বুঝি – এক্সটেন্সিভ স্টাডি (extensive study) করা এবং ইন্টেসিভ স্টাডি (intensive study) করা। এক্সটেন্সিভ স্টাডি বলতে আমরা বুঝি সকল কিছুর অল্পঅল্প জানা (to know something of everything) আর ইন্টেসিভ স্টাডি বলতে বোঝায় কোনো কিছুর গভীরে গিয়ে জানা (to know everything of something)।
-
কানাডার জীবন নিয়ে এক বাঙালি মেয়ের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা
ইংরেজি প্রবন্ধকার ফ্রান্সিস বেকন তাঁর ‘অব স্ট্যাডিজ’ প্রবন্ধে বলেছেন যে, একটা ভালো বই পাঠককে আনন্দ দেয়, তার মানসিক উৎকর্ষ বৃদ্ধি করে এবং যোগ্যতা বাড়ায়। ড. ঝর্ণা চ্যাটার্জীর ‘একটি বাঙালি মেয়ের কানাডার জীবন কাহিনী’ পড়তে গিয়ে আমার উপরের কথাগুলো মনে পড়ছিল। বইটি আমার এত ভালো লেগেছে যে বলতে গেলে একদম না থেমে বইটি প্রথমবার আমি শেষ করেছি এবং কয়েকবার থেমে দ্বিতীয়বার শেষ করেছি।
-
জীবনের অন্তিম লগনে পৃথিবীর পশ্চিম গগনে
সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠতে পারে কানাডার অভিবাসীদের সম্বন্ধে বলার ব্যাপারে আমি উপযুক্ত ব্যক্তি কি না। কারণ জীবনের প্রারম্ভে বা মধ্য গগনে আমি তো কানাডায় অভিবাসী হয়ে আসিনি। এসেছি প্রায় জীবনের অন্তিম লগনে, অর্থাৎ ৭০ বছর বয়সে। কানাডার অভিবাসী জীবনের অম্লমধুর অভিজ্ঞতাও আমার জীবনে বিশেষ নেই। আমি এখানে এসেছি ভারতবর্ষে আমার কর্মজীবন শেষ করে, প্রায় অনেকটা অতিথির মতো। সত্যি কথা বলতে গেলে, ওই হিসেবে আমার তো কানাডার অভিবাসী জীবনের কোনো প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নেই। শুধু পরোক্ষ অভিজ্ঞতা, অর্থাৎ যারা এখানে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম করেছেন তাদের অভিজ্ঞতার কথা শুনে।