• একজন নভোচারীর সাথে প্রাতরাশ

    উন্মাদনায় ভরা কাউবয় জীবনের রোমাঞ্চময় ঐতিহ্য স্মরণে প্রতি গ্রীষ্মে জুলাই মাসের প্রথমার্ধে দশদিন ব্যাপী জাঁকজমকপূর্ণ এক উৎসবের আয়োজন হয় ক্যালগেরী শহরে। কানাডীয়ান ওয়েস্টের কেন্দ্রে ম্যাজেস্টিক রকি মাউন্টেইন থেকে মাত্র ঘন্টাখানেকের দূরত্বে ক্যালগেরী শহরে সমস্ত পৃথিবী মিলিত হয় বুনো পশ্চিমের (Wild West) সাথে। ওয়েস্টার্ন হেরিটেজ উদ্‌যাপনের এই আয়োজন ‘ক্যালগেরী স্ট্যামপিড’ নামে ভুবনবিখ্যাত।

  • অন্য এক মানস সরোবর ‘লেক ল্যুইস’

    ব্যাম্‌ফ থেকে ট্রান্সকানাডা হাইওয়ে-১ ধরে ছাপ্পান্ন কিলোমিটার উত্তরপশ্চিমে লেক ল্যুইসে পৌঁছে গেলাম ঘন্টাখানেকের মধ্যে। পার্কং স্পেস থেকে লেক পর্যন্ত বনময় পথে সামান্য হাঁটতে হলো। হিমবাহের পটভূমিতে অসামান্য সুন্দর হ্রদটি দেখে বিস্ময়াবিষ্ট হয়ে গেলাম। লেক ল্যুইস সম্ভবত এই অঞ্চলের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন হ্রদ।

  • হেরিটেজ পার্ক হিস্টোরিক্যাল ভিলেজ

    ভিলেজের সব রাইড টিকিট মূল্যের মধ্যে। ডান পাশে প্রথমেই ‘গ্যাসোলিন এ্যালী’। আকর্ষণীয় ভিনটেজ কার, বিভিন্ন পেট্রোল কোম্পানির কাছ থাকে পাওয়া চমকপ্রদ সব গাসোলিন পাম্প ও এতদ্‌ সম্পর্কিত অন্যান্য আর্টিফ্যাক্টসের সহস্রাধিক স্মরণীকা আইটেমের সংগ্রহ নিয়ে উত্তর আমেরিকায় বৃহত্তম অটোমোবাইল মিউজিয়াম। ‘বেঙ্গল গ্যাসোলিন’ নামে একটা পোস্টার দেখলাম।

  • ক্যালগেরী পাবলিক লাইব্রেরি

    “মহাসমুদ্রের শত বৎসরের কল্লোল কেহ যদি এমন করিয়া বাঁধিয়া রাখিতে পারিত যে, সে ঘুমাইয়া-পড়া শিশুটির মতো চুপ করিয়া থাকিত, তবে সেই নীরব মহাশব্দের সহিত এই লাইব্রেরির তুলনা হইত। এখানে ভাষা চুপ করিয়া আছে, প্রবাহ স্থির হইয়া আছে, মানবাত্মার অমর আলোক কালো অক্ষরের শৃঙ্খলে কাগজের কারাগারে বাঁধা পড়িয়া আছে। …   …   লাইব্রেরির মধ্যে আমরা সহস্র পথের চৌমাথার উপরে দাঁড়াইয়া আছি।

  • ফ্রেমে-আঁটা ভালোবাসার আল্পনা

    চলার পথে এমন কিছু সময় এমন কিছু দিন আসে, যাকে অন্য সময়গুলোর সাথে তুলনা করলে পরিষ্কারভাবে আলাদা দেখায়। বিদ্বৎজনের সান্নিধ্যে এই ভিন্ন দিন বা সময়গুলো ভালোবাসায়, আনন্দে আর চমৎকারিত্বে প্রভা বিকিরণ করতে থাকে মনের ভেতরে। গত তিনদিন ধরে এমনই এক আলোকশিখার তাপ আর উত্তাপ বুকের ভেতর জমে আছে যেন!

  • মন্ট্রিয়াল বইমেলা: একটি ঐতিহ্য়ের উত্তরাধিকার

    ক্যানাডার সাংস্কৃতিক রাজধানী খ্যাত মন্ট্রিয়াল শহরটি গড়ে উঠেছে বারো মাসে হাজারো পার্বণের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে। সেন্ট লরেন্স নদীর তীরে বেড়ে ওঠা পাঁচশো বছরের প্রাচিন এই শহরটি ফরাসি ভাষার টেলিভিশন-প্রযোজনা, বেতার, থিয়েটার, চলচ্চিত্র, মাল্টিমিডিয়া, মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পেরও তীর্থভূমি। বিশ্বখ্যাত ক্যানাডিয়ান গীতিকার, গায়ক, কবি ও ঔপন্যাসিক লিওনার্ড কোহেন (১৯৩৪-২০১৬), ক্যানাডায় ইয়েটস-এলিয়ট…

  • কলকাতা বইমেলা এবং আমার বই-সংযোগ

    কলকাতা বইমেলায় আমি কখনও যাইনি। কলকাতাতে কবে গিয়েছি সেটাও বিশেষ মনে পড়ে না। যদিও এই কলকাতাতেই কেটেছিল আমার শৈশবের উজ্জ্বল একটি সময়।  ধর্মগতভাবে আমি হিন্দু হলেও এবং ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে আমাদের অনেক আত্মীয় ছড়িয়ে থাকলেও, বাংলাদেশের অনেক হিন্দুর মতো কলকাতা বা ভারতের সাথে আমার সংযোগ দৃঢ় হয়নি কখনও। পেশাগতভাবে লেখক হলেও, বাংলাদেশের অনেক লেখকের মতো বছর বছর কলকাতায় যাওয়া, কলকাতার লেখকদের সাথে লেনদেন তৈরি করার পরিবেশ আমি পাইনি।

  • এক কাপ চায়ে আমি…তোমাকে চাই

    চায়ের মাদকতা ঠিক কিসে? শুধুই কি তার স্বাদে গন্ধে বর্ণে নাকি আসল রোম্যান্স লুকিয়ে আছে প্রাত্যহিক অভ্যাসের আমেজে? চা আমাদের যাপনের সাক্ষী – সে একাকী যাপনই হোক অথবা যৌথ । “ওর কিন্তু খুব চায়ের নেশা” কথাটার মধ্যে বেশ একটা আদুরে প্রশ্রয় আছে, তিরস্কার বা সামাজিক অননুমোদন নেই। চায়ের নেশা বেশ আটপৌঢ়ে অথচ অন্তরঙ্গ একটা ব্যাপার – বলা যায় প্রতিদিনের চা-পান এমন একটা আচারানুষ্ঠান যা সাক্ষী থাকে আমাদের দৈনন্দিনতার, আর যা ক্রমে হয়ে ওঠে স্মৃতি ও অনুভূতির একেকটি খণ্ড।

  • ভাষা সচেতনতা দিবসে নিজের ভাষার ভালোবাসা

    কোনো ভাষা ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারা মানে কি কেবলই সেই ভাষায় সুললিতভাবে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারা? অনেকের তেমনই ধারণা। কিন্তু ভাষার পরিচয় শুধু মাত্র সাহিত্যে নয় ; তার পরিচয় সাধারণ জীবন যাপনের অংশ হিসেবে দৈনন্দিন ব্যবহারে। শহুরে কথিত বাংলা অল্পবিস্তর ইংরেজি মিশ্রিত। বিশুদ্ধতাবাদীদের ভ্রুকুটি সত্বেও এটাই এখন বাস্তব। মজাটা হয় তখন যখন কোনও কারণে আপনি পুরো বাংলায় কথা বলতে বাধ্য।

  • গ্রন্থালোচনা: একজন রনি রয়

    মায়া ওয়াহেদ সম্পাদিত ‘শাশ্বতিক : রনি প্রেন্টিস রয় সন্দর্ভ’ (২০২৩, কবিমঞ্চ প্রকাশনী, মৌলভীবাজার, বাংলাদেশ; প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ) গ্রন্থটি পড়তে বসে একজন রনি রয়কে গভীরভাবে জানা গেল। বইটি কেবল রনি রয়ের পরিচিতিমূলক সংকলন নয়; এটি গতানুগতিক স্মারকগ্রন্থ বা সংকলিত গ্রন্থের কাঠামো পেরিয়ে সত্যি সত্যি একটি অভিসন্দর্ভের মর্যাদায় উন্নীত হতে পেরেছে। তার কারণ এই সংকলনেই চিহ্নিত হয়ে আছে।

  • জিপিএস

    তখন কানাডাতে আমি একদমই নতুন। আমি ক্রাইসলার জীপের একটি গাড়ির ডিলার অফিসে সেলসের কাজ করছি। অনেকের সাথে পরিচয় হলো। ভিন্ন পেশার অনেক নতুন বন্ধু হলো। হাসি ঠাট্টা তামাসা গল্প খাওয়া দাওয়া সব মিলে খুব আনন্দেই চলছিল। এর মধ্যে আমাদের পরিচিত একজনের একটি বাস্তব ঘটনা যা কিনা আনন্দও দিয়েছিল এবং কিছুটা কষ্টও দিয়েছিল।

  • ইকবাল হাসানের গল্প: সমকালের নিখাঁদ দর্পণ

    বাংলাদেশের সাহিত্যে প্রচারবিমুখ নিভৃতচারী এক কবির নাম ইকবাল হাসান (১৯৫২-২০২৩), যিনি সত্তর দশক থেকে এদেশের কাব্য ও গদ্যের ভুবনে নিজস্ব আবাস গড়ে তুলেছেন। দেশের চিরসবুজ জেলা বরিশালের কোমল পরিবেশে জন্ম ইকবাল হাসানের। শৈশব-কৈশোর এবং যৌবনের তরঙ্গায়িত দিনগুলো অতিক্রম করে তিনি অর্থনীতিতে স্মারক শেষ করে সাংবাদিকতায় এম.এ করার জন্য ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

  • কবি ইকবাল হাসান- ভিড়ের ভেতরে ভিন্ন একজন

    আগে দু-একবার চোখে পড়লেও বা কবিতা পড়া থাকলেও বিশেষভাবে ইকবাল হাসান (জন্ম: ডিসেম্বর ৪, ১৯৫২, বরিশাল; মৃত্যু: এপ্রিল ১৩, ২০১৩, টরন্টো) নামটি আমার চিন্তার মধ্যে প্রবেশ করে ২০০২ সালের দিকে। তখন আমি ঢাকায় বসে অধ্যাপনার ফাঁকে ফাঁকে সত্তরের দশকের কবিদের কবিতা নিয়ে একটি বই লেখার চেষ্টা করছি। সত্তরের দশকে আমার জন্ম এবং বিশেষভাবে এই সময়টি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্যও ‘আবছা-আলোয়-…

  • শুধু অকারণ পুলকে

    সকালে উঠে মনটা একসঙ্গে ভালো এবং খারাপ হয়ে গেল। ভালো হওয়ার কারণ উঠেই দেখলাম আকাশ থেকে পেজা তুলোর মতন ঝিরঝির করে তুষার পরছে। আর মনটা খারাপ হলো এই জন্য, যে আজ সকালে আর বাইরে হাঁটতে যেতে পারবো না। ঠান্ডার কারণে না, ঠান্ডা খুব বেশি নয়, কারণ হলো তুষার  পড়ার ফলে ফুটপাত (এ দেশের ভাষায় সাইডওয়াক) পেছল হয়ে আছে, এই পথে হাঁটতে গেলে ‘পপাত ধরণীতলে’ হওয়ার খুব সম্ভাবনা।

  • বিদ্রোহী কবি নজরুল: এক বিরল প্রতিভা

    সময়ের হিসাবে আধুনিক বাংলা কবিতা বিশ্বযুদ্ধোত্তর এবং ভাবের দিক থেকে তা রবীন্দ্র-বিরোধী। যে ক’জন কবি সাহিত্যিক আধুনিক কবিতার ধ্বজা বহন করেছিলেন কাজী নজরুল তাদের অন্যতম। বাকিদের মধ্যে সুভাষ মুখোপাধ্যায়, গোলাম কুদ্দুস, প্রেমেন্দ্র মিত্র, জীবনানন্দ দাশ, সুধীন দত্ত, বিষ্ণু দে, অমিয় চক্রবর্তী, বুদ্ধদেব বসু …

  • কানাডায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি আমাদের কর্তব্য

    মানুষ সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে তার সন্তানকে। ঈশ্বর পাটনি নামের মাঝিকে মা অন্নপূর্ণা বর চাইতে বলাতে সে বলেছিল, “আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে।” ভগবান যেমন মানুষের মুখের আয়নায় নিজেকে দেখতে চান, সেরকম মানুষও তার সন্তানের মুখের আয়নায় নিজেকে দেখতে চায়।

  • আমার বাবা-মা

    বাবাকে অল্প বয়সে হারিয়েছি। তিনি মাত্র ছেচল্লিশ বছর বয়সে পরলোক গমন করেন। তিনি জীবনে খুব সার্থক ছিলেন। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী এবং উচ্চশিক্ষিত ছিলেন। তিনি এম.এসসি., বি. এল. (গোল্ড মেডেলিস্ট) ছিলেন।  কর্মজীবনে ছিলেন গেজেটেড অফিসার। আর সে কারণেই  আমাদের ভাই-বোনদের জীবন ছিল মাতৃকেন্দ্রিক।

  • গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ

    জহরলাল নেহেরু বলতেন যে, ভারতবর্ষকে জানতে হলে দুজনকে জানলেই চলবে – মহাত্মা গান্ধী এবং গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রথমজন যদি ভারতের শরীর হন, তাহলে দ্বিতীয় জন ভারতের আত্মা। ভারতের এই আত্মাকে জানতে হলে আমাদের প্রাচীন ভারতের শিক্ষাব্যবস্থাকে জানতে হবে। প্রাচীন ভারতীয় সমাজে শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও শিক্ষকের মর্যাদার আসন ছিল। তারই ফলস্বরূপ আমরা পেয়েছি সম্রাট অশোক এবং বিক্রমাদিত্যের মতো…

  • টরন্টোর মঙ্গল শোভাযাত্রা: ফিরে দেখা

    সকালে এবং বিকেলে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করা আমার বহু বছরের অভ্যাস। যদিও আমার এই অভ্যাসকে আড়ালে কেউ কেউ বলেন পাগলামি, কেউ বলেন বাড়াবাড়ি, আবার কেউ বলেন আদিখ্যেতা। হাঁটার কথা মনে হতেই আমার দুজনের কথা মনে পড়ছে – ৭৫ বছর আগে প্রয়াত আমার বাল্যবন্ধু খোকন শিকদার – যে বলতো যে সে সকাল এবং বিকাল দুবেলাতে মর্নিং ওয়াক করে। কারণ ওর ধারণা ছিল হাঁটার ইংরেজি মর্নিং ওয়াক।

  • বিলে-নরেন-বিবেকানন্দ

    ‘বিলে’ নামের যে দুরন্ত বালক নিজের দুরন্তপনায় বাড়ির সকল আত্মীয়, নিজের বন্ধু-বান্ধবদের এবং পাড়াপড়শিদের ব্যতিব্যস্ত করে রাখত সেই বিলে যুবক বয়সে রামকৃষ্ণদেবের ভাবশিষ্য হিসেবে যুবক নরেন্দ্রনাথ রূপে ভারতীয় সমাজকে আলোড়িত করেছিল। তিনিই আবার স্বামী বিবেকানন্দ রূপে শিকাগোর মহাধর্ম সম্মেলনের শ্রেষ্ঠ বক্তা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে সারা বিশ্বের চিন্তাবিদদের নজর কেড়েছিলেন।