• কানাডীয় শিক্ষাব্যবস্থা – প্রাথমিক স্কুল

    বহুজাতিক দেশ কানাডার শিক্ষাব্যবস্থা সামাজিক-অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। শিক্ষা এমন একটি আলোকিত বাতিঘর যা কিনা শিক্ষার্থীদের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে এবং সঙ্কীর্ণ দিগন্তের বাইরে স্বপ্ন দেখিয়ে ভবিষ্যতের আলোকিত পথগুলোকে চিহ্নিতকরে অনায়াসে। শ্রেণীকক্ষে যে জ্ঞানের বীজ বপন করা হয় তা সৃজনশীলতার সাথে লালন করে, সমালোচনামূলক চিন্তাধারার দক্ষতা দিয়ে গড়ে তোলা হয় একটি সুসজ্জিত বাগান।

  • কানাডার রাজনীতি নিয়ে বেলা-অঞ্জন সংলাপ

    প্রায় প্রতি সপ্তাহের মতো এবারও তারা ঘড়ির কাটা গুনে তাদের পছন্দের জায়গাটায়  এসে বসলো। স্কারবোরো ব্লাফসকে পেছনে রেখে এই জায়গাটা দারুণ সুন্দর – সামনে বয়ে গেছে অন্টারিও লেক, আকাশে উড়ছে গাংচিল, বাতাসে বসন্তের গন্ধ। প্রকৃতির সান্নিধ্যে তারা কত কিছু নিয়েই কথা বলে। প্রেম, ভালোবাসার প্যানপ্যানানি  বিষয় নয়, বা নয় কে কাকে সারা সপ্তাহ না দেখে মিস করছে। মিস করলেও মুখ ফুটে সেসব বলতে দুজনেরই বাধে। হাজার হলেও কিশোর কিশোরী তো নয়। তবে কথা শুরু হলে কথার খৈ ফুটতে থাকে বেলার মুখে। অঞ্জন বেশির ভাগ সময় শুনেই যায়। যদি মনে করে, কোনো বিষয়ে বেলার হাইপোথেসিসে একটু গলা না মিলিয়ে বিপরীত দিকটা তুলে ধরবে, তখন গলার স্বর যতটা সম্ভব নীচে নামিয়ে বলতে শুরু করে।

  • কানাডার আদিবাসী জনগণ: সত্য উদঘাটন ও পুনর্মিলন

    কানাডার আদিবাসী জনগোষ্ঠী, যাদের সাধারণত ফার্স্ট নেশনস, ইনুইট এবং মেটিস নামে চিহ্নিত করা হয়, তারা কানাডার প্রাচীনতম বাসিন্দা। প্রাক-ঔপনিবেশিক যুগ থেকে বর্তমান পর্যন্ত তাদের জীবন ও সমাজ ব্যবস্থা একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং সংস্কৃতির ধারক। তাদের বসবাসের স্থানগুলি দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে বিস্তৃত, যেমন উত্তর মেরু অঞ্চলের তুষারাবৃত ভূমি, পশ্চিমের পর্বতমালা, কেন্দ্রীয় প্রেইরি অঞ্চল এবং পূর্বের বনাঞ্চল। এই বৈচিত্র্যময় ভৌগোলিক অবস্থানগুলি তাদের সমাজের বিভিন্ন দিককে প্রভাবিত করেছে।

  • কানাডার শিক্ষাব্যবস্থা

    কানাডার শিক্ষা ব্যবস্থার সম্পর্কে আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসাবে। তারপরে কন্যার শিশুকাল থেকে শিক্ষার পথে ধাপে ধাপে তার এগোনোর অভিজ্ঞতা থেকে। যতটা জানি, তাই লিখছি। কিছু ভুল যে থাকবে না তা নিশ্চিত করে বলতে পারি না। শিক্ষাব্যবস্থার দায়িত্ব কেন্দ্রের নয়, প্রতি প্রদেশের – কী করে উপযুক্ত শিক্ষাব্যবস্থার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ নাগরিক হিসাবে তৈরী করা যাবে,  তারা যাতে আত্মনির্ভর হয়ে সমাজের বিভিন্নরকমের দায়িত্ব পালন করতে পারে। সংক্ষেপে বলি, কানাডাতে পাবলিক স্কুল বাধ্যতামূলক এবং তার জন্য পয়সা লাগে না – প্রাদেশিক সরকার (বা টেরিটরি) এর ব্যয় বহন করে।

  • কানাডায় বিজ্ঞান: কিছু কথা

    উন্নত জীবন ব্যাবস্থায় বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কানাডা সরকার সব সময় অনুধাবন করে এসেছে। বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ হিসেবে কানাডা সুপেয় পানির যেমন ভাগ্যপ্রসন্ন দেশ তেমনি অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদেও। OECD (Organization for Economic Co-operation and Development) দেশগুলোকে মধ্যে কানাডা হলো দ্বিতীয় রাংকিং এ আইস্ল্যাণ্ড এর পরেই যার মাথাপিছু পানি ব্যবহার হার হিংসাত্মক পর্যায়ে। এসব বিষয় মাথায় রেখে কানাডা বিজ্ঞানেও লিডিং রোলে অৰ্থাৎ নেতৃত্বের অবস্থানে আছে. অর্থনীতির পাশাপাশি উন্নত জীবনের বড়ো হাতিয়ার যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার সেটা কানাডা শুরু থেকেই বুঝে বিজ্ঞানকে কাজে লিগিয়েছে নানা ক্ষেত্রে।

  • কানাডার কৃষি

    অন্য-বস্ত্র এবং বাসস্থানসহ মানুষের নানান মৌলিক চাহিদার যোগান  আসে কৃষি থেকে। আর তাই, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কৃষি  হয়ে ওঠে এক অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা আজ এই লেখার মাধম্যে পাঠকদেরকে কানাডার কৃষি সম্পর্কে একটি মৌলিক ধারণা দেয়ার চেষ্টা করবো। আমরা জানি, পানি , মাটি ও জলবায়ু কৃষির অন্যতম উপাদান। কানাডার কৃষিকে বুঝতে হলে এই তিনটি বিষয়ের আলোকে কানাডার কৃষি সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে এবং সেই  সাথে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত দেশগুলোর জলবায়ু ও ঋতুচক্র বিষয়েও  কিছুটা ধারণা থাকা আবশ্যক। আমরা এই লেখার শুরুতে কানাডার জলবায়ু , ঋতুচক্র, কানাডার ভৌগোলিক অঞ্চলের পরিচিতি, কানাডায় জন্মানো প্রধান প্রধান শস্যসমূহ, কানাডার মৎস্যসম্পদ এবং পশুসম্পদ বিষয়ে আলোচনা শুনবো।

  • জীবনের অন্তিম লগনে পৃথিবীর পশ্চিম গগনে 

    সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠতে পারে কানাডার অভিবাসীদের সম্বন্ধে বলার ব্যাপারে আমি উপযুক্ত ব্যক্তি কি না। কারণ জীবনের প্রারম্ভে বা মধ্য গগনে আমি তো কানাডায় অভিবাসী হয়ে আসিনি। এসেছি প্রায় জীবনের অন্তিম লগনে, অর্থাৎ ৭০ বছর বয়সে। কানাডার অভিবাসী জীবনের অম্লমধুর অভিজ্ঞতাও  আমার জীবনে  বিশেষ নেই। আমি এখানে এসেছি ভারতবর্ষে আমার কর্মজীবন শেষ করে, প্রায় অনেকটা অতিথির মতো। সত্যি কথা বলতে গেলে, ওই হিসেবে আমার তো কানাডার অভিবাসী জীবনের কোনো প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নেই। শুধু পরোক্ষ অভিজ্ঞতা, অর্থাৎ যারা এখানে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম করেছেন তাদের অভিজ্ঞতার কথা শুনে।

  • কানাডার শিল্পী ও শিল্পকলা : সেকাল ও একাল

    কানাডার শিল্প সেই দেশে বসবাসকারী বিভিন্ন জাতির মতোই বহুমুখী এবং বৈচিত্র্যময়। কানাডা তার বিশাল ও বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য সুপরিচিত, একই সাথে একটি সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় শৈল্পিক ঐতিহ্য গড়ে তুলেছে। আদিবাসী শিকড় থেকে সমকালীন প্রকাশ পর্যন্ত, কানাডিয়ান শিল্প দেশের বিশাল প্রাকৃতিক দৃশ্য, সাংস্কৃতিক মিশ্রণ এবং ঐতিহাসিক ঘটনাসমূহের বর্ণনাগুলিকে প্রস্ফুটিত করে। কানাডার শিল্পের বিবর্তন সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানতে পারা যায় এই দেশের শিল্প ঐতিহ্যকে গঠনকারী বেশ কিছু প্রভাবশালী শিল্পীদের কথা।

  • সুস্থ সমাজ বিনির্মাণে নাগরিক অধিকার ও দায়িত্ব

    মানুষ প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্যেই, সহজাতভাবেই মুক্ত, অবাধ থাকতে চায়। জন্মজাত রিপুর তাড়নে, ক্রীয়াশীল থাকতে চায়। সামাহীন ইচ্ছাকে পূরণ করতে চায়। জৈবিক ক্ষুধা নিবারণ করতে চায়। মানুষের এ চাওয়া অতলান্তিক, অপরিমিত। মানুষের অনিয়ন্ত্রিত চাওয়া এবং পরিণামে কাড়াকাড়ি, হানাহানি, হিংসা, হিংস্রতা, বর্বরতা মানুষের মধ্যযুগীয় জীবন ধারার কথা মনে করিয়ে দেয়।  মধ্যযুগীয় সেই বর্বর, পাশবিক জীবনধারা থেকে মানুষ নিজের প্রয়োজনে, চেষ্টায় এবং বুদ্ধিমত্তায় বেরিয়ে আসতে পেরেছে একটি সভ্য মানবিক জীবন যাপনের কাঠামো নির্মাণ করতে পেরেছে। মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার ক্ষেত্র প্রশস্ত হওয়ার সাথে সাথে, মানুষ তার ইচ্ছাশক্তিকে চালিকাশক্তিতে পরিণত ক’রে, স্বপ্নকে একে একে ছুঁয়ে যাচ্ছে। মানুষ উন্নত থেকে উন্নততর জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। তার জ্ঞান-বুদ্ধির বিকাশ এবং প্রয়োগের মাধ্যমে নিজের ভেতরে থাকা পশুত্ব নিয়ন্ত্রন করে বিবেক বিবেচনা ও মানবিকতার মেলবন্ধনে একটি সুস্থ সহায়ক এবং সহযোগিতার বাতাবরণে আধুনিক সমাজ রাষ্ট এবং বিশ্বব্যবস্থা নির্মাণ করেছে মানুষ।

  • ষড়ভুজের মণ্ডল কানাডা

    দেশ দেশান্তরে ঘড়ির কাটা কখনও এক থাকে না। কারণ একেক দেশ ওই জায়গার নির্দিষ্ট সময়ের মানদণ্ড মেনে চলে। আমরা যখন এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমণ করি তখন সেভাবে ঘড়ি ঠিক করে নিতে হয়। সর্বউত্তরের নুনাভুট, ইউকন থেকে শুরু করে সর্বদক্ষিণের প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ড, সেন্ট জোনস দ্বীপপুঞ্জ, নিউ ফাউল্যান্ড। আমরা  বলছি আটলান্টিক সাগর পাড়ের শ্বেতকন্যা কানাডার কথা। তার সীমানা এত দূর দূরান্তে বিস্তৃত যে তাকে ছয়টি সময় নির্ঘন্ট মেনে চলতে হয়। আয়তনে রাশিয়ার ঠিক পরেই অবস্থান করা কানাডার সময়ের মান-মণ্ডল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মিলে যায়। ওখানেও ছয়টি ভিন্ন ঘড়ি চলে। সবচেয়ে বেশি ভিন্ন ভিন্ন সময়ের হিসাবে চলে রাশিয়া – মোট এগারো বার আপনাকে ঘড়ির কাটা পালটাতে হবে ওই দেশে বেড়াতে গেলে।

  • কানাডার আদ্যন্ত

    ১৮৬৭ সালে কানাডা কনফেডারেশনে অন্তর্ভুক্ত হলেও কানাডার ইতিহাস প্যালিও-ভারতীয় আগমন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত হাজার হাজার বছর বিস্তৃত। ইউরোপিয়দের আগমনের পূর্বে বর্তমান কানাডা জুড়ে আদিবাসীদের নিজস্ব সংস্কৃতি, বানিজ্য, সামাজিক সংগঠন এবং আধ্যাত্মিক বিশ্বাস ছিল যা ইউরোপীয়দের আগমনের পর সময়ের সাথে প্রায় সবকিছুই বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং পরে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে বিলুপ্ত ইতিহাস জনসম্মুখে আসে। প্রত্নতাত্ত্বিক এবং আদিম জেনেটিক প্রমাণ ইঙ্গিত করে যে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা ছিল শেষ মহাদেশ যেখানে মানুষ স্থানান্তরিত হয়েছিল। প্রায় ৫০,০০০–১৭,০০০ বছর আগে মানুষ সাইবেরিয়া থেকে উত্তর-পশ্চিম উত্তর আমেরিকায় বেরিং ল্যান্ড ব্রিজ  পেরিয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়। সেই সময়ে, তারা লরেনটাইড আইস শীট দ্বারা হাজার হাজার বছর ধরে আলাস্কা এবং ইউকন পর্যন্ত আটকে ছিল। প্রায় ১৬,০০০ বছর আগে, তুষার গলনের ফলে মানুষ দক্ষিণ এবং পূর্ব বেরিঙ্গিয়া বরাবর কানাডায় প্রবেশ করে।

  • ফুল নিয়ে কথা

    প্রকৃতিকে যদি আমরা একজন মূক ও বধির চিত্রকর মনে করি, যিনি কথা বলেন বা শোনেন না, শুধু আপনমনে নানা রকমের ছবি এঁকে যান তাহলে বেশ হয়। আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে আমরা প্রকৃতিকে ধর্ম বলে মেনে নিয়েছি কারণ প্রকৃতির মাঝেই মানুষের জীবন বিবর্তিত হয়ে থাকে। একাগ্রচিত্তে লক্ষ করলে প্রকৃতির মাঝে কতগুলি শাশ্বত গুণ দেখা যায় যেমন সে নিরাসক্ত, নির্মোহ আর নির্বিকার। কিন্তু এসব অনাসক্তি সত্ত্বেও সে নিরন্তর কর্মরত। এই সনাতন কর্মধারা অনিবার ও অশেষ।