• সুব্রত কুমার দাসের ‘উৎস থেকে পরবাস’: নতুন এক অভিজ্ঞতার সন্ধান

    ২০২১ সালে সারা কানাডায় যে ২৫ জন শ্রেষ্ঠ অভিবাসীর ৭৫ জনের যে সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশিত হয় তার মধ্যে লেখক, গবেষক ও সংগঠক সুব্রত কুমার দাস একজন। তাঁর আত্মজীবনীমুলক গ্রন্থ ‘উৎস থেকে পরবাস’ পড়লাম। পুরো বইটিই বিভিন্ন সময়ের ফোনালাপন সাক্ষাৎকার। এই বইটি পাঠ ছিল আমার এক নতুন অভিজ্ঞতা। দেবান্জনা মুখার্জি ভৌমিকের সহজ, সরল, বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্নের মাধ্যমেই শ্রদ্ধেয় সুব্রত কুমার দাস বর্ণনা করেছেন তাঁর শিকড় থেকে বেরিয়ে এসে এখন পর্যন্ত শাখা প্রশাখায় বেড়ে উঠার গল্প।

  • উপন্যাসের শিল্পরূপ

    বাংলাদেশের কয়েকজন ঔপন্যাসিক বইটি দশজন ঔপন্যাসিকের মৌল প্রবণতা, জীবনঘনিষ্ঠ ও সমাজনিরীক্ষাধর্মী শিল্পদর্শন, চরিত্র নির্মাণ ও মনো-বিশ্লেষণ, নিসর্গপ্রকৃতি ও মানবজীবন- সর্বোপরি সমকালীন কথাসাহিত্যে তাঁদের মান ও অবস্থান, কাহিনী বিন্যাসের বয়নদক্ষতা ও বর্ণিত বিষয়ের অন্তরালে আভাসিত বিষয়গুলো সুব্রত কুমার দাস তুলে এনেছেন। ঔপন্যাসিক অন্তর্ভুক্তি প্রশ্নে গ্রন্থকারের নিবেদন:গ্রন্থটি কোনক্রমেই বাংলাদেশের প্রধান বা নির্বাচিত ঔপন্যাসিকদের নিয়ে রচিত নয়। পাঠ পরিক্রমায় যে সকল লেখক সাম্প্রতিক অতীতে পুরোপুরি বা প্রয়োজনীয় ব্যাপকতায় আমার সামনে উপস্থিত হয়েছেন তাঁরাই এতে অন্তর্ভুক্ত।

  • এক পাঠকের দুটি কথা

    সুব্রত কুমার দাস রচিত শ্রমলব্ধ ‘রবীন্দ্রনাথ: কম-জানা অজানা’ গ্রন্থখানি পাঠ করার সুযোগ আমার হয়েছে। ১০৪ পৃষ্ঠার বইটি পাঠ করে আমরা জানতে পারি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নামে এক বাঙালি কবিকে নিয়ে তৎকালীন পশ্চিমা বিশ্বের সারস্বত সমাজের আগ্রহ ও ভাবনা। মানব হৃদয়ের অলঙ্ঘনীয় বোধের নিপুণ রূপকার হিসেবে বাঙালি তো বটেই অপরাপর সংস্কৃতির মহৎ সৃষ্টির প্রতি আগ্রহ আছে এ রকম যে কোন ভাষাভাষীর রসিক জনের কাছেও এক বিস্ময় হিসেবে বিবেচিত হবেন বলে আমার ধারণা।

  • কম-জানা, অজানা রবীন্দ্রনাথ নিয়ে

    রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একটি পৃথিবী। তাঁকে জানার যেন কোন শেষ নেই। শতবর্ষ-প্রাচীন রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে অত্যন্ত কৌতুহলউদ্দীপক অজানা তথ্য সুব্রত তাঁর সহজাত ও সরস ভাষায় পাঠকদের কাছে এই বইয়ের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। এটি পরিশ্রমসাধ্য গবেষণা গ্রন্থ কিন্তু একইসাথে সুন্দর সাহিত্যের দাবীদার অবশ্যই। বইটি রবীন্দ্র-গবেষণার নতুন আলোক উন্মোচিত করবে। যারা রবীন্দ্রনাথকে আবারও নব আঙ্গিকে আবিষ্কার করতে চান তাদের জন্য এই বইটি একটি অন্যতম মাইলফলক।

  • বহির্বিশ্বের অজানা রবীন্দ্রনাথ

    একজন মানুষের কতখানি ধৈর্য, প্রেম এবং অভিনিবেশ থাকলে পরে এমন একটি গ্রন্থ রচনা করা যায় রবীন্দ্রনাথ: কম-জানা, অজানা পাঠ না করলে অনুধাবনে সক্ষম হতাম না। গ্রন্থটির কলেবর ১০৪ পৃষ্ঠা মাত্র কিন্তু মনে হয় একটি বিশাল পৃথিবীকে ধারণ করে আছে! কিছু কাগজের মধ্যে এত বড় একটা অজানা রবীন্দ্র-নিখিলটাকে ধারণ করিয়ে রাখার কৃতিত্ব বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক সুব্রত কুমার দাসকে দিতেই হবে! তাঁকে বিশেষভাবে সাধুবাদ জানাই এই কারণে যে, কম-জানা, অজানা রবীন্দ্রনাথ বিষয়ক প্রসঙ্গগুলোকে গ্রন্থাগার ও ইন্টারনেট থেকে খুঁজে খুঁজে সেচে এনে যে মহাধৈর্যের সঙ্গে লিপিবদ্ধ করেছেন তাতে করে আমরা যারা রবীন্দ্রনাথকে একটু বেশিই ভালোবাসি তাদের জন্য এক মহার্ঘ্য। গতানুগতিক রবীন্দ্র-গবেষণার দিকে মানুষের এখন ঝোঁক কম।

  • কম-জানার অতৃপ্তি মেটে না কখনো

    ফ্রাঙ্কো ফারিনা- ইটালিয়ান ফিল্ম আর্কাইভের কিউরেটর। তাঁর সাথে বন্ধুত্ব নিশিথ সূর্যের দেশ অসলোতে ২০১০ সালের মে মাসে। পৃথিবীর ১১৪টি দেশের ফিল্ম আর্কাইভের নির্বাহীরা যোগ দিয়েছেন ‘ফেডারেশন অব ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম আর্কাইভস্’ (FIAF)-এর ৬৬তম কংগ্রেসে। কংগ্রেসের প্রতিনিধিদের জন্য অসলো নগরীর মেয়র ৩রা মে তারিখে ঐতিহাসিক সিটি হলে এক সংবর্ধনার আয়োজন করেন। আমরা পায়ে হেঁটে চলেছি গন্তব্যের দিকে। কথা প্রসঙ্গে ফারিনা আমাদের বাঙালির গর্ব, নোবেল সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী কবি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে নতুন নতুন অনেক তথ্য উপস্থাপন করে সবাইকে একবারে তাক লাগিয়ে দিতে শুরু করল। দলে উপস্থিত এশীয়দের মধ্যে আমিই একমাত্র বাঙালি, সুতরাং একটু অস্বস্তিতে ভুগছি।

  • রবীন্দ্র-অধ্যয়নে মূল্যবান সংযোজন

    রবীন্দ্রজন্মের সার্ধশত বৎসর পার হচ্ছে। রবীন্দ্রকৃতি নিয়ে স্বদেশে বিদেশে আজও চলছে অজস্র গ্রন্থ প্রকাশ। তাঁর শিল্প, সাহিত্য, সংগীত, রাজনীতি ও সমাজচিন্তা, কৃষি ও গ্রাম-সংস্কারের কাজ, শিক্ষাচিন্তা এমনি বহুমাত্রিক কর্মকাণ্ড ভাবিয়ে তুলছে বর্তমান প্রজন্মকেও। নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তি উপলক্ষে ইউরোপ ও আমেরিকায় যে অনুকূল ও প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল তার কালানুক্রম অনেকেরই এখনো কম-জানা বা অজানা রয়ে গেছে। পুরস্কার প্রাপ্তির পর নিজ দেশের বাইরে অন্যান্য দেশে বিশ্বমানব রবীন্দ্রনাথের ধ্যান-ধারণা এবং সাহিত্যকর্ম কতখানি গৃহীত হয়েছিল তা এখনো দেশবাসীর কাছে অস্পষ্ট। রাজনৈতিক ঘূর্ণাবর্তও কখনো কখনো প্রবল হয়ে উঠেছিল। সুব্রত কুমার দাসের ‘রবীন্দ্রনাথ: কম-জানা, অজানা’ গ্রন্থটি এসব নিয়ে বহুতথ্য ও প্রমাণাদিসহ উপস্থাপন করেছে।

  • নজরুল-বীক্ষা এবং আমি

    ২০১৩ সালের ’অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ আমার জন্য বিশেষ এক গ্রন্থমেলা। অন্যান্য গ্রন্থমেলায় আমার প্রবেশ ঘটত শুধুমাত্র একজন পাঠক হিসেবে. কিন্তু এবার প্রবেশ করেছি লেখক হিসেবেও। সাহিত্যের প্রতি টান এবং লেখার মাধ্যমে সমাজ, সংসার, দেশকে বদলে দেয়ার অঙ্গীকার নিয়েই আমার লেখক জীবণের শুরু। অস্ত্রের চেয়ে কলমের শক্তি লক্ষগুণ- একথা বিশ্বাস করি মনেপ্রাণে। আর একারণেই কলম ধরা। আমার প্রথম সৃষ্টি ’অনুরণন’। কিন্তু মানুষের হৃদয় বড় দূর্ভেদ্য দূর্গ। সে হৃদয়ে সহজ প্রবেশ শুধুমাত্র ভাগ্যবানের পক্ষেই স্বম্ভব; আমার মত আম-জনতার না- এ কথা বুঝতে খুব বেশি সময় লাগল না। যে দুয়েকজন আমার উপন্যাস পড়ল, তারা প্রশংসা করল আর যারা আমার নাম জানে না, আমাকে চেনে না, তারা প্রত্যাখ্যান করল। এই প্রত্যাখ্যান এখনও অব্যাহত।

  • নজরুল বিষয়ক দশটি প্রবন্ধ: ছোট পরিসরে বড় কাজ

    জন্মসূত্রে সম্প্রদায়গত ঐক্যের কারণে কবি নজরুলের প্রতি আবেগজাত ভালবাসা যতটা দৃশ্যমান, তাঁর সৃষ্টির প্রতি শ্রদ্ধাজাত অনুশীলন সে অনুপাতে একেবারেই হিসাবের মধ্যে আনার মতো নয়। হিসাবের গণ্য হলে নজরুলের সব সৃষ্টিকর্ম বাজারে সহজলভ্য হতো। তাঁর সাহিত্যাদর্শ ও জীবনদর্শন শিক্ষিত (সার্টিফিকেটধারী অর্থে) লোকজনের কাছে পরিচিত থাকত। প্রয়োজন পড়ত না ‘নজরুল ইনস্টিটিউট’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে নজরুল ভক্তি প্রদর্শনের প্রজ্ঞাপনের। প্রয়োজন যা পড়ে তা হলো সাহিত্যামোদীর মন নিয়ে বা গবেষকের মন নিয়ে নজরুল সাহিত্য পাঠের। তরুণ গবেষক-সমালোচক-সাহিত্যামোদী সুব্রত কুমার দাস ‘নজরুল বিষয়ক দশটি প্রবন্ধ’ লিখে এই সত্যটিই প্রমাণ করলেন। নজরুল বিষয়ে তাঁর সম্প্রতি প্রকাশিত এই বইটি নজরুলের সাহিত্য বিষয়ে দশ দিগন্ত উন্মোচক।

  • নজরুলকে আবার দেখা

    কাজী নজরুল ইসলামকে নানা ভাবে দেখা যায়, এবং দেখা সম্ভব। তরুণ গবেষক সুব্রত কুমার দাস তাঁর বই নজরুল বিষয়ক দশটি প্রবন্ধ-এ নজরুলকে ভাবালুমুক্তভাবে মূল্যায়ন করেছেন। বইটিতে অন্যতম প্রধান ও দৃষ্টিগ্রাহ্য প্রবন্ধ হচ্ছে, ‘নজরুল সংযোগে সৈয়দ আবদুর রব এবং মোয়াজ্জিন’। তবে ‘সংযোগে’ শব্দটি এখানে অনুপযুক্ত মনে হচ্ছে। প্রবন্ধটি প্রবন্ধকারের গবেষণা ও পরিশ্রমের ফসল। সৈয়দ আবদুর রব-এই নামটিও বাঙালী মুসলমানেরা ভুলে যাচ্ছিল। সুব্রত সেই হারিয়ে যাওয়া স্রোতের বাঁক থেকে তুলে এনেছেন তাঁকে। নজরুলের সঙ্গে তাঁর আন্তরিক, গভীর এবং আত্মিক সম্পর্ক ছিল, ছিল দুই পরম ব্যক্তিত্বের মধ্যে বাঙালী মুসলমানের বিকাশের জন্য প্রণোদনা।

  • কোড়কদী: ঐতিহাসিক এক গ্রাম অনুসন্ধান

    দেশবিভাগের ক্ষত আমাদের জাতীয় মানসপট থেকে এখনও যে দূর হয়নি তা এপার-ওপার বাংলা কথাসাহিত্যিকদের লেখা-কথা-বলা থেকে উপলব্ধি করা যায়। হাসান আজিজুল হক রাঢ়বঙ্গের স্মৃতি যেমন ভুলতে পারেন না, তেমনি মিহির সেনগুপ্ত বরিশালের স্মৃতি ভুলতে পারেন না। উভয়ের লেখার মধ্যে জন্মভূমির স্মৃতিকাতরতা স্পষ্টতই প্রতিফলিত হয়। দেশবিভাগের জন্য যতোই না আমরা ইংরেজদের দোষ দেই আমাদের তৎকালীন ভারতবর্ষীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের কী কোনোও দোষ নেই। বলতে চাই আমাদের সাবেক কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ নেতৃত্ব কী এ থেকে নিজেদেরকে ক্রুটিমুক্ত রাখতে পারবেন? সংকীর্ণ ধর্মীয় গোড়ামীর রেষ তাই আমরা আজও বয়ে বেড়াচ্ছি। তাইতো মাঝে মাঝে দেখা যায় হিন্দু মুসলমানের সংঘাত।

  • বাংলা কথাসাহিত্য: যাদুবাস্তবতা এবং অন্যান্য

    যাদুবাস্তবতার বিষয়টি বাংলা কথাসাহিত্যে সাম্প্রতিক এবং নতুন হলেও এর চর্চা, চর্যা ও আলোচনার গ-িটি সীমিত পরিসরে আর থাকেনি। গ্রন্থটির শিরোনামে যাদুবাস্তবতা বিষয়টি নজর কাড়লেও লেখকের উদ্দেশ্য কেবল এর মধ্যে সমীকৃত নয় বরং আরো বিস্তৃৃত পরিসরে বাংলা সাহিত্যের বহু ধারিক ও বহুধা বিভক্ত বিষয়গুলোকে গবেষণাধর্মী বর্ণনায় তুলে আনতে চেষ্টা করেছেন লেখক। বাংলা কথাসাহিত্যের অপ্রচলিত ধাপটাকে যেমন এখানে প্রমূর্ত মনে হয়, অন্যদিকে স্বল্পএজ অথচ ঋদ্ধিমান শিল্পপ্রকরণে আবিষ্ট এমন দু’একজন এই আলোচনায় স্থান পেয়েছে: যা পাঠককে নতুনত্বের স্বাদ দিতে সক্ষম হবে।

  • বাংলা কথাসাহিত্য যাদুবাস্তবতা এবং অন্যান্য

    আধুনিককালে ‘সাহিত্য সমালোচনা’ সৃজনশীল সাহিত্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কথাশিল্পী তার সৃষ্টিতে গভীর মনোনিবেশ করেন এবং একজন সফল সমালোচক শিল্পীর সৃষ্টিতে বহুমাত্রিক দৃষ্টিনিবদ্ধ করেন। তাই সাহিত্য সমালোচনা নিঃসন্দেহে একটি সিরিয়াস মননশীল কাজ। এ প্রসঙ্গে T.S. Eliot বলেন- Criticism… must always profess an end in view, which, roughly speaking, appears to be the elucidation of works of art and the correction of taste.

  • কথাসাহিত্য বিবেচনায় ঘরোয়া মেজাজ

    বিশ শতকে কথাসাহিত্যের বিষয় ও পরিসর বিস্তৃত হয়েছে বিচিত্র মাত্রায়। বিবিধ নতুন অনুষঙ্গ এবং প্রযুক্তি কথাসাহিত্যের গতিমুখ আলোকিত করেছে যাদুবাস্তবতা তেমনি এক চমকপ্রদ অনুষঙ্গ ও শিল্প প্রকৌশল। বিশ্বসাহিত্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলা ভাষার কথাকারগণও বহুধা ভাবনায় কথাসাহিত্যের ভুবন সমৃদ্ধ করে চলেছেন। চিন্তা ও পরিসর প্রসারিত হবার সঙ্গে সঙ্গে কথাসাহিত্য বিচারে এবং মূল্যায়নেও যোগ হয়েছে অপরিচিত সব দৃষ্টিভঙ্গি। গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ (জ. ১৯২৮)-এর One Hundred Years of Solitude (নিঃসঙ্গতার এক শ’ বছর; রচনা ১৯৬৫, প্রকাশ ১৯৬৭) গ্রন্থটি ১৯৮২ সালে নোবেল পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হবার পর বিশ্বব্যাপী যাদুবাস্তবতার চিন্তা ও পাঠ ব্যাপকতর হতে থাকে।

  • অন্তর্বাহ: সময়ের অগ্রবর্তী এক আত্মকথন

    মূলত সাহিত্য-গবেষণা, প্রবন্ধ ও অনুবাদ নিয়ে ব্যস্ত থাকা লেখক সুব্রত কুমার দাস একজন স্বভাবসুলভ লেখক। গবেষণামূলক লেখা, প্রবন্ধ কিংবা অনুবাদে যেমনটি তিনি সাবলীলতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন প্রায় দুই যুগ ধরে, তেমনই প্রাণের পরশ জাগিয়ে দিয়েছে তাঁর উপন্যাস পাঠকদের হৃদয়ে। লেখক তাঁর পাঠকদের উপহার দিয়েছেন মোট ছাব্বিশখানা বই। লেখকের গুণ বিচার করার দুঃসাহস তাই আর নাইবা দেখালাম আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াসে, বরং তাঁর লেখা প্রথম ও একমাত্র উপন্যাস অন্তর্বাহ নিয়েই না হয় হোক আজকের আলোচনা।

  • অন্তর্বাহ : স্মৃতি-বাস্তবতার মেলবন্ধন

    গল্প বলা ও গল্প শোনার ব্যাপারে এ উপমহাদেশের মানুষের মধ্যে বিশেষ ধরনের মোহ কাজ করে হাজার বছর ধরে। বাঙালিদের মধ্যে এ বিষয়টি আরও প্রবলভাবে কাজ করে; গ্রামীন বাংলার মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কোনো ধরনের আয়োজন ছাড়া গল্পকথকদের কাছে শোনা গল্পগুলো যেন শ্রোতাদেরকাছে হয়ে উঠতো অনবদ্য। স্মৃতি রোমন্থন করে প্রতিনিয়ত খুঁজে পাওয়া নানান টুকরো ঘটনাগুলো যেন জীবন নামক মহাকাব্যের এক একটি পাতা হয়ে ওঠে। অন্যদিকে সময়ের বাস্তবতায় ক্রমশ পরিষ্কার হয়ে যায় একজন মানুষের ‘হয়ে ওঠা’। স্মৃতি ও বাস্তবতার মাঝখানে থেকে উপলব্ধি করা সময়ের নাম ‘অন্তর্বাহ’; একটি উপন্যাস।

  • রবীন্দ্রনাথ ও মহাভারত: পাঠ অভিজ্ঞতা

    মহাভারতকে বলা হয়ে থাকে ভারতীয় চিৎপ্রকষ্ট তথা ধী-শক্তির ইতিহাস। ভারত এখানে রাষ্ট্রিক কিংবা ভৌগলিক অভিধার ভূখণ্ড নয়। ভা অর্থ অলৌকিক আলো, রত অর্থ হচ্ছে বিকিরণ। তার সরল ভাবার্থ হচ্ছে যা চিরকাল আলোর দিব্যতাকে ডেকে আনে। সেই ভাবগত অর্থে মহাভারত হচ্ছে ধী-শক্তির আধার। এই মহাকাব্যকে নিয়ে যুগে যুগে বহু গ্রন্থ রচিত হয়েছে। আগামীতে আরও বহু গ্রন্থ প্রণীত হবে। বাংলাদেশ ভূখণ্ডে যদিও মহাভারত ভাবুক খুব বেশী নেই। তবু বেশ কিছু চিন্তক, মহাভারত নিয়ে লিখেছেন। তারই সাম্প্রতিক প্রকাশনা রবীন্দ্রনাথ ও মহাভারত লিখেছেন সুব্রত কুমার দাস।

  • ‘শ্রীচৈতন্যদেব’: একটি সমীক্ষা

    গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ম ও ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের বৈষ্ণবধর্মের মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে এবং সে বৈশিষ্ট্য শ্রীচৈতন্যদেবকে কেন্দ্র করে বিবর্তিত হয়েছে। ঈশ্বর যেখানে ‘বজ্রাদপি কঠোরাণি’ সেখানে তিনি ভক্তির পাত্র নন, ভীতির পাত্র। যেখানে তিনি ‘মৃদুনি কুসুমাদপি’ সেখানে তিনি রসময়, অর্থাৎ ভক্তি ও প্রেমের ঘনীভূত সত্তা। প্রেমের এই নিগূঢ় তত্ত্ব ব্যাখ্যা সাপেক্ষ নয়, অনুভূতিবেদ্য। জ্ঞানমার্গ সাধারণ মানুষের সহজগম্য নয়। ভক্তিমার্গ সহজতর বিকল্প। শ্রীচৈতন্য মানুষকে দেখিয়েছেন ভক্তিমার্গের পথ।

  • শ্রীচৈতন্যদেব গ্রন্থের ওপর আলোকপাত

    “বাঙালির হিয়া অমিয় মথিয়া নিমাই ধরেছে কায়া” – বাঙালির এমন নিমাই শ্রীচৈতন্যদেবকে নিয়ে টরন্টোবাসী লেখক ও গবেষক সুব্রত কুমার দাসের বড়ো আদর, বড়ো শ্রদ্ধা, ভক্তি ও ভালোবাসা দিয়ে লেখা গ্রন্থ শ্রীচৈতন্যদেব। গ্রন্থের মর্মমূলে প্রবেশ করার পূর্বে গ্রন্থের ‘প্রাককথন’-এ উল্লিখিত গোঁসাই দাদুর রূপ-মাধুর্যে এবং জাগতিক ও আধ্যাত্মিক গুণ মাধুর্যে মুগ্ধ লেখক তাঁর গোঁসাই দাদুর প্রতি আশৈশবের শ্রদ্ধা, ভক্তি, প্রেম, ভালোবাসাকে যে বাণী মাধুর্যে বন্ধন করেছেন, তা পাঠ করে আমার অনুভব ও উপলব্ধির জগতে এক অপার্থিব আনন্দ উদ্বেলিত হয়ে উঠেছে।

  • কানাডীয় সাহিত্য নিয়ে প্রথম বাংলা গবেষণাগ্রন্থ

    কানাডার রাজনীতি, ব্যবসা, শিক্ষা, প্রশাসন, পুলিশ ও সামরিক বাহিনীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাঙালিরা এগিয়ে গেলেও এ দেশের সাহিত্য নিয়ে বাঙালিদের চিন্তাভাবনা খুব কমই চোখে পড়েছে। এমনি এক প্রেক্ষাপটে টরন্টোবাসী সুব্রত কুমার দাস রচিত ‘কানাডীয় সাহিত্য: বিচ্ছিন্ন ভাবনা’ গ্রন্থটি কানাডীয় সাহিত্যকে উদ্ভাসিত করবে বাংলাভাষী পাঠকদের মননজগতে। যদিও অল্প কয়েকজন বাংলাভাষী কানাডীয় সাহিত্যিক ইতিমধ্যে ইংরেজিতে গল্প, উপন্যাস, কবিতা, অনুবাদ ইত্যাদি বিষয়ে নিজেদের প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়েছেন, সমগ্র কানাডীয় সাহিত্যের একটি রূপরেখা তৈরি করে বাংলাভাষী পাঠক সমাজের কাছে উন্মোচিত করার কঠিন কাজটি সংশোধিত করার গরজ কেউ উপলব্ধি করেননি।