কথাসাহিত্য বিবেচনায় ঘরোয়া মেজাজ

কথাসাহিত্য বিবেচনায় ঘরোয়া মেজাজ

বিশ শতকে কথাসাহিত্যের বিষয় ও পরিসর বিস্তৃত হয়েছে বিচিত্র মাত্রায়। বিবিধ নতুন অনুষঙ্গ এবং প্রযুক্তি কথাসাহিত্যের গতিমুখ আলোকিত করেছে যাদুবাস্তবতা তেমনি এক চমকপ্রদ অনুষঙ্গ ও শিল্প প্রকৌশল। বিশ্বসাহিত্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলা ভাষার কথাকারগণও বহুধা ভাবনায় কথাসাহিত্যের ভুবন সমৃদ্ধ করে চলেছেন। চিন্তা ও পরিসর প্রসারিত হবার সঙ্গে সঙ্গে কথাসাহিত্য বিচারে এবং মূল্যায়নেও যোগ হয়েছে অপরিচিত সব দৃষ্টিভঙ্গি। গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ (জ. ১৯২৮)-এর One Hundred Years of Solitude (নিঃসঙ্গতার এক শ’ বছর; রচনা ১৯৬৫, প্রকাশ ১৯৬৭) গ্রন্থটি ১৯৮২ সালে নোবেল পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হবার পর বিশ্বব্যাপী যাদুবাস্তবতার চিন্তা ও পাঠ ব্যাপকতর হতে থাকে।

অন্তর্বাহ: সময়ের অগ্রবর্তী এক আত্মকথন

অন্তর্বাহ: সময়ের অগ্রবর্তী এক আত্মকথন

মূলত সাহিত্য-গবেষণা, প্রবন্ধ ও অনুবাদ নিয়ে ব্যস্ত থাকা লেখক সুব্রত কুমার দাস একজন স্বভাবসুলভ লেখক। গবেষণামূলক লেখা, প্রবন্ধ কিংবা অনুবাদে যেমনটি তিনি সাবলীলতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন প্রায় দুই যুগ ধরে, তেমনই প্রাণের পরশ জাগিয়ে দিয়েছে তাঁর উপন্যাস পাঠকদের হৃদয়ে। লেখক তাঁর পাঠকদের উপহার দিয়েছেন মোট ছাব্বিশখানা বই। লেখকের গুণ বিচার করার দুঃসাহস তাই আর নাইবা দেখালাম আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াসে, বরং তাঁর লেখা প্রথম ও একমাত্র উপন্যাস অন্তর্বাহ নিয়েই না হয় হোক আজকের আলোচনা।

অন্তর্বাহ : স্মৃতি-বাস্তবতার মেলবন্ধন

অন্তর্বাহ : স্মৃতি-বাস্তবতার মেলবন্ধন

গল্প বলা ও গল্প শোনার ব্যাপারে এ উপমহাদেশের মানুষের মধ্যে বিশেষ ধরনের মোহ কাজ করে হাজার বছর ধরে। বাঙালিদের মধ্যে এ বিষয়টি আরও প্রবলভাবে কাজ করে; গ্রামীন বাংলার মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কোনো ধরনের আয়োজন ছাড়া গল্পকথকদের কাছে শোনা গল্পগুলো যেন শ্রোতাদেরকাছে হয়ে উঠতো অনবদ্য। স্মৃতি রোমন্থন করে প্রতিনিয়ত খুঁজে পাওয়া নানান টুকরো ঘটনাগুলো যেন জীবন নামক মহাকাব্যের এক একটি পাতা হয়ে ওঠে। অন্যদিকে সময়ের বাস্তবতায় ক্রমশ পরিষ্কার হয়ে যায় একজন মানুষের ‘হয়ে ওঠা’। স্মৃতি ও বাস্তবতার মাঝখানে থেকে উপলব্ধি করা সময়ের নাম ‘অন্তর্বাহ’; একটি উপন্যাস।

রবীন্দ্রনাথ ও মহাভারত: পাঠ অভিজ্ঞতা

রবীন্দ্রনাথ ও মহাভারত: পাঠ অভিজ্ঞতা

মহাভারতকে বলা হয়ে থাকে ভারতীয় চিৎপ্রকষ্ট তথা ধী-শক্তির ইতিহাস। ভারত এখানে রাষ্ট্রিক কিংবা ভৌগলিক অভিধার ভূখণ্ড নয়। ভা অর্থ অলৌকিক আলো, রত অর্থ হচ্ছে বিকিরণ। তার সরল ভাবার্থ হচ্ছে যা চিরকাল আলোর দিব্যতাকে ডেকে আনে। সেই ভাবগত অর্থে মহাভারত হচ্ছে ধী-শক্তির আধার। এই মহাকাব্যকে নিয়ে যুগে যুগে বহু গ্রন্থ রচিত হয়েছে। আগামীতে আরও বহু গ্রন্থ প্রণীত হবে। বাংলাদেশ ভূখণ্ডে যদিও মহাভারত ভাবুক খুব বেশী নেই। তবু বেশ কিছু চিন্তক, মহাভারত নিয়ে লিখেছেন। তারই সাম্প্রতিক প্রকাশনা রবীন্দ্রনাথ ও মহাভারত লিখেছেন সুব্রত কুমার দাস।

‘শ্রীচৈতন্যদেব’: একটি সমীক্ষা

‘শ্রীচৈতন্যদেব’: একটি সমীক্ষা

গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ম ও ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের বৈষ্ণবধর্মের মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে এবং সে বৈশিষ্ট্য শ্রীচৈতন্যদেবকে কেন্দ্র করে বিবর্তিত হয়েছে। ঈশ্বর যেখানে ‘বজ্রাদপি কঠোরাণি’ সেখানে তিনি ভক্তির পাত্র নন, ভীতির পাত্র। যেখানে তিনি ‘মৃদুনি কুসুমাদপি’ সেখানে তিনি রসময়, অর্থাৎ ভক্তি ও প্রেমের ঘনীভূত সত্তা। প্রেমের এই নিগূঢ় তত্ত্ব ব্যাখ্যা সাপেক্ষ নয়, অনুভূতিবেদ্য। জ্ঞানমার্গ সাধারণ মানুষের সহজগম্য নয়। ভক্তিমার্গ সহজতর বিকল্প। শ্রীচৈতন্য মানুষকে দেখিয়েছেন ভক্তিমার্গের পথ।

শ্রীচৈতন্যদেব গ্রন্থের ওপর আলোকপাত

শ্রীচৈতন্যদেব গ্রন্থের ওপর আলোকপাত

“বাঙালির হিয়া অমিয় মথিয়া নিমাই ধরেছে কায়া” – বাঙালির এমন নিমাই শ্রীচৈতন্যদেবকে নিয়ে টরন্টোবাসী লেখক ও গবেষক সুব্রত কুমার দাসের বড়ো আদর, বড়ো শ্রদ্ধা, ভক্তি ও ভালোবাসা দিয়ে লেখা গ্রন্থ শ্রীচৈতন্যদেব। গ্রন্থের মর্মমূলে প্রবেশ করার পূর্বে গ্রন্থের ‘প্রাককথন’-এ উল্লিখিত গোঁসাই দাদুর রূপ-মাধুর্যে এবং জাগতিক ও আধ্যাত্মিক গুণ মাধুর্যে মুগ্ধ লেখক তাঁর গোঁসাই দাদুর প্রতি আশৈশবের শ্রদ্ধা, ভক্তি, প্রেম, ভালোবাসাকে যে বাণী মাধুর্যে বন্ধন করেছেন, তা পাঠ করে আমার অনুভব ও উপলব্ধির জগতে এক অপার্থিব আনন্দ উদ্বেলিত হয়ে উঠেছে।

কানাডীয় সাহিত্য নিয়ে প্রথম বাংলা গবেষণাগ্রন্থ

কানাডীয় সাহিত্য নিয়ে প্রথম বাংলা গবেষণাগ্রন্থ

কানাডার রাজনীতি, ব্যবসা, শিক্ষা, প্রশাসন, পুলিশ ও সামরিক বাহিনীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাঙালিরা এগিয়ে গেলেও এ দেশের সাহিত্য নিয়ে বাঙালিদের চিন্তাভাবনা খুব কমই চোখে পড়েছে। এমনি এক প্রেক্ষাপটে টরন্টোবাসী সুব্রত কুমার দাস রচিত ‘কানাডীয় সাহিত্য: বিচ্ছিন্ন ভাবনা’ গ্রন্থটি কানাডীয় সাহিত্যকে উদ্ভাসিত করবে বাংলাভাষী পাঠকদের মননজগতে। যদিও অল্প কয়েকজন বাংলাভাষী কানাডীয় সাহিত্যিক ইতিমধ্যে ইংরেজিতে গল্প, উপন্যাস, কবিতা, অনুবাদ ইত্যাদি বিষয়ে নিজেদের প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়েছেন, সমগ্র কানাডীয় সাহিত্যের একটি রূপরেখা তৈরি করে বাংলাভাষী পাঠক সমাজের কাছে উন্মোচিত করার কঠিন কাজটি সংশোধিত করার গরজ কেউ উপলব্ধি করেননি।

কানাডীয় সাহিত্য-  বিচ্ছিন্ন ভাবনাঃ সামাজিক প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য

কানাডীয় সাহিত্য- বিচ্ছিন্ন ভাবনাঃ সামাজিক প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য

বাংলা ভাষাভাষী পাঠকের বিশ্ব সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ কম নয়। বিশ্ব সাহিত্য আস্বাদনে বাঙালি পাঠকের মূল ভরসা বাংলায় অনুবাদ ও ইংরেজদের ঔপনিবেশিক শাসন সূত্রে লব্ধ ভাষা ইংরেজি রচনার মাধ্যমে। অন্য কোনো ভাষায় দখল সম্পন্ন বাঙালির সংখ্যা খুবই কম বলে সেসব ভাষার মূল রচনা থেকে পাঠের সুযোগ সীমিত অল্প কিছু মানুষের মধ্যে।

কানাডীয় সাহিত্যের পরিচয় ও সূত্রসন্ধান

কানাডীয় সাহিত্যের পরিচয় ও সূত্রসন্ধান

ইংরেজি সাহিত্যের একজন ছাত্র হিসেবে অ্যাকাডেমিক কোর্স/ পাঠ্যের সঙ্গে আমরা আমেরিকা এবং ইউরোপ মহাদেশের মহান সব কবি-সাহিত্যিকের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। আমাদের নিত্যদিনের পাঠ-পঠনে আফ্রিকান সাহিত্যের কিছুটা সন্ধান পাওয়া  গেলেও ‘কানাডিয়ান সাহিত্য’কে কোনোদিনই আলাদা করে শনাক্ত করতে পারিনি। বিশ্বসাহিত্যের উন্মুক্ত প্রান্তরে, উত্তর আমেরিকা থেকে শুরু করে ইউরোপ হয়ে দক্ষিণ এশিয়া মহাদেশের প্রজ্ঞাবান অধ্যাপকদের মুখে কানাডিয়ান সাহিত্যের বিস্ত‍ৃত ভা-ারের সন্ধান কেউ পেয়েছেন কিনা আমার সন্দেহ হয়। 

ভিনদেশি সাহিত্যের চক্রব্যুহ ভেদের কথা

ভিনদেশি সাহিত্যের চক্রব্যুহ ভেদের কথা

প্রাবন্ধিক ও গবেষক সুব্রত কুমার দাস ২০১৩ সালে কানাডা প্রবাসী হয়েছেন স্বপরিবারে। বাংলাদেশে থাকাকালীন নজরুল ও রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য ও জীবনী নিয়ে বিস্তর কাজ করেছেন। প্রবাস জীবনের রূঢ় বাস্তবতার সামনে দাঁড়িয়ে আর যাই হোক কেউ সেই দেশের সাহিত্যের রস আস্বাদন করবে সেটা ভাবা যায় না কিংবা এটাও ভাবা যায় না সেই সাহিত্য নিয়ে প্রবন্ধ-নিবন্ধ লেখার প্রাসঙ্গিকতা নিয়েও।

বিশাল কানাডার সাদৃশ্যস্বরূপ এর সাহিত্যের ভান্ডার

বিশাল কানাডার সাদৃশ্যস্বরূপ এর সাহিত্যের ভান্ডার

১৬২৮ সালে লন্ডন থেকে প্রকাশিত রবার্ট হেইম্যানের ‘কুয়োডলিবেটস’-কে বলা হয় কানাডার প্রথম কাব্যসৃষ্টি। এরপর ১৭৬৯ এর ‘দ্য হিস্ট্রি অব এমিলি মন্টেগু’ – ক্যানলিটের প্রথম উপন্যাস যার স্রষ্টা ফ্রান্সেস মুর ব্রুক। ১৯০৬ সালে টরন্টো থেকে আর্চিবল্ড ম্যাকমার্চি প্রকাশ করেন ‘হ্যান্ডবুক অব কানাডিয়ান লিটারেচার’। কানাডিয়ান সাহিত্য নিয়ে প্রকাশিত প্রথম কোন সহায়ক বই ছিল এটি!

মহাভারতের নিবিড় পাঠ

মহাভারতের নিবিড় পাঠ

মহাভারতকে বলা হয়ে থাকে  শ্রুতিরূপ জোৎস্না, বলা হয়ে থাকে পঞ্চমবেদ। এতে এই মহাকাব্যটির প্রচ্ছদ মোড়া হয়ে যায় ধর্ম-ভাবুকতায়। আবার মহাভারতকে ইতি-আস অর্থাৎ ইতিহাস রূপেও তাঁর চরিত্রকে শনাক্ত করা হয়ে থাকে। সুব্রত কুমার দাস মহাভারতকে বলেছেন, আমার মহাভারত। আমার মহাভারত মানে যা তাঁর নিজস্ব অধীত বিদ্যার ফল তাই তিনি পরিবেশন করেছেন প্রজ্ঞার পানপাত্রে।