• ‘নিভৃত পূর্ণিমা’: দিনের আলোয় রাতের তারার গল্প

    মানুষের পুরোটা জীবন জুড়ে কি একটাই গল্প থাকে?  নাকি জীবনের বাঁকে বাঁকে  গল্প থাকে? এই প্রশ্ন পাঠকেরা হয়তোবা করেন না, কিন্তু একজন ঔপন্যাসিক এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যান তার উপন্যাসে। অনেক চড়াই উৎরাই,  অনেক চাওয়া পাওয়া,  অনেক ঘাত প্রতিঘাত ঠেলে এগিয়ে চলা জীবনের কোথাও কোথাও  লুকানো থাকে আনন্দ বা বেদনা, যা হয়তো দেখা যায় না কিন্তু সেই আনন্দ বেদনার গল্প কেউ কেউ  পুষে রাখে হৃদয়ের মখমলের কৌটায়। সেই গল্প মানুষের মনের নিভৃত কোঠায় পূর্ণিমার অপার্থিব জোৎস্না ছড়িয়ে যায়। পূর্ণেন্দু পত্রী লিখেছিলেন, “ধরো কোন একদিন যদি খুব দূরে ভেসে যাই/ আমারও সোনার কৌটো ভরা থাকবে প্রতিটি দিনের/ এইসব ঘন রঙে, বসন্ত বাতাসে, বৃষ্টি জলে।/ যখন তখন খুশি ওয়াটার কালারে আঁকা ছবিগুলো/ অম্লান ধাতুর মতো ক্রমশ উজ্জ্বল হবে সোহাগী রোদ্দুরে।“

  • মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে প্রেমের উপন্যাস

    বাংলাদেশের একটি মফস্বল শহর  চাঁদপুরের স্কুলপড়ুয়া অঞ্জন আর মঞ্জুলী’র প্রথম ভালবাসার অনুভূতি দিয়ে উপন্যাসের শুরু। একটু চোখের দেখা, একটু হাসি, ভুল করে হাতে হাত ছুঁইয়ে দিয়ে হালকা ইশারায় প্রেম।  মুরুব্বীদের পাহারার মাঝেও লুকোচুরি করে করে এগিয়ে যায় কিশোর-কিশোরীর প্রেম। এমনি সময় চলে আসে রক্তঝরা একাত্তর। মুক্তিযুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যে জীবন বাঁচাতে আরো অনেক পরিবারের মত অঞ্জনের পরিবারও মফস্বল ছেড়ে প্রত্যন্ত গ্রামে চলে যায়। আর মঞ্জুলীর পরিবার চলে যায় ভারতের শরণার্থী শিবিরে। 

  • কবি জামিল বিন খলিল এবং তাঁর কাব্যগ্রন্থ “ও আকাশ তুমি থামো”

    মাহিদুল ইসলাম জামিল বিন খলিলের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ ও আকাশ তুমি থামো’ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে জেনে আমি অত্যন্ত আনন্দিত এই ভেবে যে আবৃত্তিপ্রেমী বন্ধুরা এক মলাটে সজ্জিত অনেকগুলো আবৃত্তির জন্য উপযোগী কবিতা পেতে যাচ্ছেন। জামিলের এসময়ের সুলেখা কবিতাগুলো গ্রন্থাকারে পাঠকের হাতে পৌঁছলে নতুন বইয়ের সুঘ্রাণের সাথে তাঁর স্পর্শকাতর কবিহৃদয়ের আবেগ-অনুভূতিও…

  • ‘ও আকাশ তুমি থামো নিয়ে’

    অপরাহ্ণ সুসমিতো যে সব কারণে একজন কবি তার সমাজের, স্বদেশের ও পৃথিবীর; সে সবই বিস্তার ঘটেছে কবি জামিল বিন খলিলের ভাবনায়, প্রকাশে অর্থাৎ তিনি একই সাথে মানবিক যুগপৎ। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধিকার আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু যেমন এসেছে তাঁর কবিতায়, তেমনি অপরূপ ছন্দ দোলায় প্রকাশ করেছেন প্রকৃতি, নারী স্বাধীনতা, জ্যোৎস্না ও…

  • ‘….সূর্য মানে না বশ’

    দেলওয়ার এলাহী ‘ কবিতা কি শুধু তাই / মনের খেয়ালে কাগজে কলমে শব্দ সাজাই?’ কবি ও গীতিকার শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা এই গানের কবিতায় যে প্রশ্ন, যে জিজ্ঞাসার প্রকাশ হয়েছে, তা আমলে নিতেই হয়। কেননা, কবিরাও মানুষ। আর মানুষ যেহেতু সমাজ ও প্রতিবেশেরই অংশ; সেহেতু, কবিকেও এর প্রভাবে বিচলিত হয়ে হয়।…

  • বাদল ঘোষের কাব্যগ্রন্থ “সহাস্য উল্লাসে আজীবন” অকপট স্পষ্টতার উচ্চারণ

    অপুর্ব কাব্যময়তার মধ্য দিয়ে সমকালীন জীবনের নানা জটিলতার মাঝে চমৎকার আর সহজ আশাবাদ প্রকাশ করে কেউ কেউ কবিতা লিখতে পারেন। বাদল ঘোষ তেমনি একজন কবি। তাঁর কবিতায় উচ্চারিত হয়েছে প্রেম, প্রকৃতি, স্বদেশ, আশাবাদ, অধ্যাত্ববাদ, প্রবাস জীবনের অনন্য নিঃসঙ্গতা এবং স্মৃতি। তাঁর কবিতার অপূর্ব চিত্রকল্প পাঠককে অবলীলায় বেড়াতে নিয়ে যাবে দূরের কোন স্টেশনে অথবা ভালবাসামাখা কোন গ্রামে অথবা বরফের একাকী কোনো শহরে।

  • অতনু দাশ গুপ্তের ‘গল্পেসল্পে কিছুক্ষণ’

    কোন উপকথা বা পৌরাণিক গল্প বা কোন রূপকথার গল্প শুনে শুনে বাংলাভাষী পাঠকের ছেলেবেলা কেটে গেলেও বাংলা সাহিত্যে ছোটগল্প লেখার চর্চা তত বেশী নয়, যদিও বর্তমান সময়ের ব্যস্ত পাঠক ছোটগল্প পড়তে পছন্দ করেন। এই প্রেক্ষাপটে অতনু দাশ গুপ্তের ‘গল্পেসল্পে কিছুক্ষণ’ বইটি খুব চমৎকার একটি উদাহরণ। বইটির ১২টি গল্প পাঠককে ঘুরিয়ে আনবে ১২টি ভুবন থেকে। নতুন দেশের নানান গল্প, অপরূপ দৃশ্যাবলীর কাব্যময় বর্ণনা, পারিবারিক ভালোবাসা, বন্ধুত্বের আনন্দ, সমাজ ও জীবনদর্শনের পাশাপাশি লেখক তাঁর নিজের বাস্তব কিছু অভিজ্ঞতাও বলেছেন এই গল্পগুলোতে।

  • এলিনা মিতার কবিতা হিরন্ময় মনের কাব্য

    আধুনিক এই জটিল সময়ে জীবনের অজস্র টানাপোড়েন, নিঃসঙ্গতা, বেদনা, হতাশা, দ্রুত শিল্পায়নে বদলে যাওয়া মানুষের বিপ্রতীপ মুখাবয়ব আর পুঁজিবাদী সমাজের পীড়নে ক্লিষ্ট জীবনে করোটিতে ভাবনার ইন্দ্রজাল বিছিয়ে কবিতা রচনা করা যায়। সেই কবিতায় থাকে দ্রোহ আর বহমান এই জীবন থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা। ‘হিরন্ময় পাখি মন’ গ্রন্থে কবি এলিনা মিতা আশা-নিরাশা, একাকিত্ব, হতাশা, মুক্তির প্রত্যাশা আর নস্টালজিয়ার ছবি এঁকেছেন। ইংরেজ কবি টি এস এলিয়ট বলেছেন, ‘কবিতা আবেগের প্রকাশ নয়, বরং আবেগ থেকে বের হয়ে আসা; এটি ব্যক্তিত্বের প্রকাশ নয়, ব্যক্তিত্বকে সর্বজনীন করে তোলা।‘ অর্থাৎ কবিতায় আবেগ থাকলেও কবিতায় প্রকাশিত বার্তা স্থান-কালের উর্ধে উঠে জীবনের এক চরম বাস্তবতা প্রকাশ করে।

  • একটি পড়ার মত বই

    এমনই একটি ‘পড়ার মত বই’ লিখেছেন আমাদের আকতার হোসেন ভাই। ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাস। নাম, ‘মিস্টার প্রেসিডেন্ট।’ সাহিত্যে, শিল্পকলায় আকতার ভাই বহুমুখী প্রতিভাধর মানুষ। তাঁর মত একজন মানুষ যখন অস্ত্র হাতে যুদ্ধে গিয়ে একটি ফুলকে বাঁচিয়ে ফিরে এসে সেই ফুলের বর্ণগন্ধছন্দকে তাঁর লেখার উপজীব্য করেন, তখন তা সত্য ও সুন্দরের চ্ছটায় দীপ্যমান হয়ে ওঠে, অন্য মাত্রা পায়। বিচারপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জনাব আবু সাইদ চৌধুরীই ‘মিস্টার প্রেসিডেন্ট’ – প্রবাসে যাঁর মুক্তিযুদ্ধকালীন কর্মযজ্ঞের ইতিহাসকে আশ্রয় করে গড়ে উঠেছে উপন্যাসের পরিকাঠামো।

  • মিস্টার প্রেসিডেন্ট

    আবুল হাসান (কায়সার) চৌধুরী সদ্য প্রকাশিত ‘মিস্টার প্রেসিডেন্ট’ উপন্যাসের নায়ক হলেন জাস্টিস আবু সাঈদ চৌধুরী, আমার পিতা। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোয় যখন স্লোগান দেওয়া হতো ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা’। ‘জাগো জাগো বাঙালি জাগো’ ঠিক সেই সময়টাতে আবু সাঈদ চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে যোগ দেন। এর আগে…

  • আকবর হোসেনের ‘অনুভবের বিভূতিতে’ ঐশ্বরিক ভাবনার স্বতঃস্ফূর্ত কবিতা

    ‘আত্মপরিচয়’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, ‘যেটা লিখিতে যাইতেছিলাম সেটা সাদা কথা, সেটা বেশি কিছু নহে – কিন্তু সেই সোজা কথা, সেই আমার নিজের কথার মধ্যে এমন একটা সুর আসিয়া পড়ে, যাহাতে তাহা বড় হইয়া ওঠে, ব্যক্তিগত না হইয়া বিশ্বের হইয়া ওঠে।’ মহৎ সাহিত্যকর্মগুলি অনেক সময়ই লেখকের ব্যক্তিগত গল্প। কিন্তু সেই গল্প বলার দক্ষতা ও দর্শনের বিচারে সেটি মহৎ সাহিত্যকর্ম হয়ে উঠে। আকবর হোসেনের ‘অনুভূবের বিভূতিতে’  গ্রন্থটিতে তাঁর নিজের জীবন ও কাছাকাছি থাকা মানুষদের জীবনের গল্পের দার্শনিক প্রকাশ ঘটেছে। লেখকের জ্ঞান, প্রজ্ঞা , উপস্থাপন-কৌশল ও ভাষা দক্ষতার কারণে এইসব ব্যক্তিগত ঘটনাগুলি হয়ে উঠেছে নৈর্ব্যক্তিক।

  • হে মহাজীবন – এক গৃহস্থ সন্ন্যাসীর আত্মকথন

    অন্য যে কোন গ্রন্থ আলোচনা যতটা নির্মোহভাবে করা সম্ভব, জীবনীগ্রন্থ নিয়ে ঠিক তেমনটা করা চলে না – যেহেতু এখানে লেখক নিজেই তার রচনার প্রধান চরিত্র। কিন্তু, বর্তমান গ্রন্থটির ক্ষেত্রে কাজটা তেমন কঠিন নয়। কারণ, আলোচ্য গ্রন্থটির লেখক একজন অত্যন্ত নির্মোহ, নির্গ্রন্থ মানুষ। তাঁর জীবনের কর্মসূত্রই হচ্ছে নিঃস্কাম কর্ম। কাজের বিনিময়ে যিনি ফলের আশা করেন না, সংসারে যিনি থেকেও নেই তাঁকে কোনভাবেই বিব্রত করা যায় না।